ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বর্জ্য শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবিকার নিরাপত্তা দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৩০ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২০ সোমবার

বর্জ্য শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবিকার নিরাপত্তা দাবিতে প্রেস ক্লাবে মিডিয়া ক্যাম্পেইন

বর্জ্য শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবিকার নিরাপত্তা দাবিতে প্রেস ক্লাবে মিডিয়া ক্যাম্পেইন

বাংলাদেশের সকল সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি- ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি কর্তৃক অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্যজীবী ও গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহকারী শ্রমিকদের আইনি অনুমোদন বা স্বীকৃতি দান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

এ লক্ষ্যে আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে যাত্রাবাড়ী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিক ইউনিয়ন, যাত্রাবাড়ী গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিক ইউনিয়ন ও গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির যৌথ উদ্যোগে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক ও গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ওজীবিকার নিরাপত্তা’ শীর্ষক একটি মিডিয়া ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়।  

গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির অ্যাডভোকেসি পরিচালক জনাব এ বি কে রেজা'র সঞ্চালনে মিডিয়া ক্যাম্পেইনে সভাপতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ী গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জনাব রুস্তম আলী। 

এছাড়া, সভায় মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জনাব রিনা বেগম। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক জনাব এ কে এম মাকসুদ। 

এছাড়া বর্জ্যজীবী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবিকা নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করেন ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের যাত্রাবাড়ী থানা কমিটির সভাপতি জনাব শরীফ মিয়া, যাত্রাবাড়ী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জনাব মরিয়ম বেগম, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির পরিচালক (কর্মসূচি) জনাব খন্দকার রিয়াজ হোসেন, অ্যাডভোকেসি অফিসার জনাব এ. আজিম শিকদার প্রমূখ। 

সভায় সরকারের কাছে এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকালীন প্রতিশ্রুতিদান ও তা রক্ষাকল্পে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে বাংলাদেশ বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিন্মোক্ত দাবি তুলে ধরা হয়: 

১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যেহেতু সিটি করপোরেশনেরই এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্যজীবী ও গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিকরা যেহেতু তাদেরই পক্ষে রাস্তা-ঘাট-বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও তা সঠিক স্থানে ফেলে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটি করে চলেছে, সেহেতু অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্যজীবী ও গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিকদের প্রতেককে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড প্রদান করতে হবে।

২. অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্যজীবী ও গৃহস্থালী বর্জ্যজীবীদেরকে সিটি করপোরেশনের পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে চাকুরি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. অপ্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্যজীবী ও গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ শ্রমিকরা অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং বিপদজনক পরিবেশে কোনও রকমের পেশাগত সুরক্ষা বা দক্ষতা ছাড়াই কাজ করে থাকে; তাই ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কর্তৃক তাদের জন্য সেফটি ইকুইপমেন্ট ও সুরক্ষা প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

৪. দারিদ্র্য, অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে বর্জ্যজীবীরা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং এই ক্ষতির কারণে তারা বার বার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। তাই সরকার কর্তৃক বর্জ্যজীবীদের জন্য অবিলম্বে একটি বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি (সোস্যাল সেফটিনেট প্রোগ্রাম) গ্রহণ করতে হবে।

৫. বর্জ্যজীবীরা, মূলত শিশু বর্জ্যজীবীরা শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এমতাবস্থায়, বর্জ্যজীবীদের মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকারের বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।

৬. বর্জ্যজীবীদের জন্য বর্জ্য পুণঃচক্রায়ন বা রিসাইক্লিং, বর্জ্য অপসারণের জন্য লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদির উপর প্রশিক্ষণ এবং বর্জ্যজীবী ও ক্ষুদ্র রিসাইক্লিং ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়নের সুযোগ দিতে হবে। যার ফলে বর্জ্যজীবীদের জন্য শোভন কর্মসংস্থান ও টেকসই শহর সৃষ্টির পথ সুগম হবে।

৭. বর্জ্যজীবীদের দ্বারা সংগৃহীত পুণঃচক্রায়ন বা রিসাইক্লিং পণ্যের দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে যা তাদের জীবিকার জন্য হুমকি স্বরূপ; তাই এই বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্জ্যজীবীরা যাতে পুণঃচক্রায়ন বা রিসাইক্লিং পণ্যের ন্যায্য দাম পায় তার সুব্যবস্থা করতে হবে।

৮. বর্জ্যজীবীরা দীর্ঘদিন যাবত ঢাকায় বসবাস করা সত্ত্বেও তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘বিদেশী’ হিসেবে পরিচিত; তাই তাদের অধিকার রক্ষায় নাগরিক সনদপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. প্রারম্ভিক যত্ন ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বর্জ্যজীবী শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। 

১০. যেসব এলাকায় ‘ডাম্প সাইট’ অবস্থিত সেই জায়গাগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দিবা-যত্ন কেন্দ্র, প্রাক-বিদ্যালয় বিকাশ কেন্দ্র ও একীভূত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
 
১১. প্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্যজীবী ও গৃহস্থালী বর্জ্যজীবীদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে অকুপেশনাল সেফটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

১২. বর্জ্যজীবীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশণ বিষয়ক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

১৩. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ ও জাতীয় নগর স্বাস্থ্য কৌশল ২০১৪-এ উল্লিখিত নগরের দারিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে।

১৪. বর্জ্যজীবী শিশুর পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে জাতীয় শিশু উন্নয়ন নীতিমালার বাস্তবায়ন এবং শিশু আইন-২০১৩ এর আওতায় সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড, থানার শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার ডেস্ক এবং শিশু আদালত প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর কার্যকর ও শিশুবান্ধব করতে সহায়ক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে  হবে।

১৫. বাংলাদেশে পৃথকভাবে তিনটি পাত্রে পচনশীল, অপচনশীল ও পুণঃচক্রায়নযোগ্য এবং ক্ষতিকারক বর্জ্য ফেলার নিয়ম বাস্তবায়নে আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তাবায়ন করতে হবে।

১৬. বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষতঃ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ও এ সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

১৭. বর্জ্যজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবিকা নিরাপত্তাসহ মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি যুগোপযোগী আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে। 

এনএস/