গেট ম্যান না থাকায় জামালগঞ্জে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৬:০৪ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ রেল ষ্টেশনের মাতাপুর এলাকার লেভেল ক্রসিংটি এক বছর আগে পুনঃনির্মাণ করে রেল কর্তৃপক্ষ। সেখানে নতুন গেট ব্যারিয়ারও বসানো হয়েছে। আছে গেটম্যানের বিশ্রামাগার।
কিন্তু সেখানে কোনো গেটম্যান না থাকায় প্রায় সময় ঘটছে প্রাণ হানির মতো ঘটনা। আজ মঙ্গলবারও ট্রেনের ধাক্কায় মোকলেছার রহমান (৩৬) নামে এক কলা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার মাতাপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের মাতাপুর লেভেল ক্রসিংয়ে এঘটনা ঘটে। রক্ষিত ওই লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান না থাকার কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মাতাপুর লেভেল ক্রসিংয়ে আগে কোনো গেট ব্যারিয়ার না থাকলেও এখন সবকিছু আছে শুধু একজন গেটম্যান নেই। আর এ কারণেই প্রায় সময় ঘটছে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা।
মঙ্গলবার সকালে জামালগঞ্জ বাজার থেকে কলা কিনে সেগুলো শ্যালো মেশিন চালিত (অবৈধ) ভটভটিতে বোঝাই করে নিয়ে আসছিলেন মোকলেছার রহমান ও আইজুল হোসেন নামে দুই কলা ব্যবসায়ী। সকাল ১০টার দিকে তাদের ভটভটিটি মাতাপুর লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী তিতুমীর আন্তঃনগর ট্রেন ওই ভটভটিকে ধাক্কা দেয়। ওই সময় আইজুল হোসেন লাফ দিয়ে বেঁচে গেলেও চালক মোকলেছার রহমান ট্রেনের ধাক্কায় ভটভটির সাথেই দুমড়ে মুচরে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নিহত ওই চালকের সঙ্গে থাকা কলা ব্যবসায়ী আইজুল হোসেন বলেন, স্থানীয় দোকানপাটের কারণে পশ্চিম দিক থেকে ওই গেট পার হওয়ার সময় দক্ষিণ দিক থেকে কোনো ট্রেন আসছে কিনা তা দেখা যায় না। আমাদের গাড়ি রেল লাইনের উপরে ওঠার আগে ট্রেন দেখতে পাইনি।
গাড়িটি তিনটি রেল লাইনের মধ্যে দুটি পার হওয়ার সময় ট্রেন ধাক্কা দেয়। ওই সময় আমি গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়লেও আমার সাথে থাকা মোকলেছার নামতে পারেনি। সে গাড়ির সাথে মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।
মাতাপুর গ্রামের মিলন হোসেন বলেন, আগে এই গেটে বাঁশের গেট ব্যারিয়ার ছিল। তখন স্থানীয় লোকজন সেটি দেখা শোনা করত। এক বছর আগে এই গেটে সিগন্যাল লাইট, গেট ব্যারিয়ার ও গেট ম্যান থাকার জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো গেটম্যান এখন পর্যন্ত এখানে নেই।
লিটন হোসেন বলেন, ট্রেন আসা দেখলে অনেক সময় স্থানীয়রাই গেট ব্যারিয়ারটি ওঠা-নামানো করেন। গেট ম্যান না থাকায় আজকের মত এর আগেও এই গেটে প্রাণহারি মতো ঘটনা ঘটেছে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রেন আসার সময় এখানে কোনো ট্রেন হর্ণ দেয় না। কর্তৃপক্ষকে শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
রুকিন্দীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহসান কবির বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে এ ইউনিয়নের মধ্যে মাতাপুর লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। বর্তমানে এখানে লেভেক্রসিংয়ে আধুনিকরণ করা হলেও নেই কোনো স্থায়ী গেটম্যান। এখানে গেটম্যান না দিলে আজকের মত আরও অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে।’
আক্কেলপুর রেল ষ্টেশনের ইনচার্জ খাতিজা আক্তার বলেন, জামালগঞ্জ রেল ষ্টেশনের দক্ষিণে টি/৭৬ নম্বর লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান এখনও দেয়নি রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তবে লেভেল ক্রসিংয়ে নতুন করে গেট ব্যারিয়ার বসানো হয়েছে। এবং গেটম্যানের জন্য একটি নতুন বিশ্রামাগারও তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত সেখানে গেটম্যান নিয়োগ দিবে।
এআই/এসি