বিএসএফের আপত্তিতে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবনের কাজ বন্ধ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপেস্টের নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নকশা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে বিএসএফ। বিষয়টি সুরাহার জন্য পূর্বের নকশায় পরিবর্তন এনেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও বিএসএফ কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দফায় বিএসএফের আপত্তির কারণে কাজ বন্ধ হলো।
জানা গেছে, প্রতিদিন আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। এই যাত্রী সংখ্যার বিপরীতে বর্তমান ইমিগ্রেশন ভবনটি একেবারেই ছোট এবং জরাজীর্ণ। বারবার সংস্কার করে কোনো রকমে টিকে আছে ভবনটি। টানা বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি জমে ইমিগ্রেশন ভবনের সামনে। তখন যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।
এছাড়াও বর্তমান ভবনটিতে যাত্রীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। এর ফলে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি আধুনিক ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৬ সালে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নির্মাণ কাজটি দেয়া হয় মেসার্স বিজনেস সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনের দুইতলা পর্যন্ত করতে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সামগ্রী এনে জড়ো করার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলে। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তত্ত্বাবধানে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। পাইলিংয়ের কাজ চলার মধ্যেই নকশা নিয়ে আপত্তি তুলে আবারও নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে বিএসএফ।
বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফ জানিয়েছে, ভূমি থেকে ৩৫ ফুটের বেশি উচ্চতার ভবন করা যাবে না। এর ফলে গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় কাজ বন্ধ রাখার কারণে চরম বিপাকে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে এই কাজের পেছনে দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে আমাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল দুইতলা পর্যন্ত করার। এখন আমরা চরতলা করব। নতুন এই ভবনে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসসহ দুই দেশের যাত্রীদের জন্য আধুনিক সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। বিএসএফ ভবনের নকশা নিয়ে আপত্তি তুলেছে। তারা চাইছে ৩৫ ফুট বেশি উচ্চতার ভবন যেন না হয়। আর আমাদের দরকার ৪০ ফুট। তবে নকশা পরিবর্তন করে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নকশাটি বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফের কাছে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ২০১৪ সালের দর অনুযায়ী ২০১৬ সালের দরপত্রে এই কাজটি পেয়েছি। ২০২০ সালে এসে আমাদের ২০১৪ সালের দর অনুযায়ীই কাজ করতে হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রী ও শ্রমিক খরচসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। কাজটি পেয়েছি বলে আমাদের করতে হবে। কিন্তু এই কাজ করে আমাদের লোকসানের শেষ নেই।
বিজিবির ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, বিএসএফ আমাদের কাছে আপত্তির কথা বলার পর আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। এটির সুরাহা মন্ত্রণালয় হয়ে আসবে, আমাদের কাছে কিছু নেই। এটা সুরাহা যখন হবে তখন আবার আমরা জানাবো।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, বিএসএফ জানিয়েছে ৩৫ ফুট উচ্চতার বেশি ভবন করা যাবে না। আমরা সেই অনুযায়ী নকশা অনুমোদন করে তাদের কাছে জমা দিয়ে রেখেছি। তারা জানিয়েছে বৈঠক করে পুনরায় কাজের সিদ্ধান্ত দেবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। দ্রুত কাজটি করা প্রয়োজন। কারণ সেবা প্রত্যাশীরা প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ছেন।