ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় মধু চাষে আধুনিক ছোঁয়া
ব্রাক্ষণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:০২ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার
আশুগঞ্জের সরিষা ক্ষেতে পাশে পদ্ধতিতে মধু চাষ। ছবি: একুশে টেলিভিশন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সরিষা ক্ষেতে শুরু হয়েছে আধুনিক পদ্ধতিতে মধু চাষ। হলুদ বর্ণের সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে আর মৌমাছির গুঞ্জন ও গুনগুনানিতে এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। আর মধুচাষীরা ধুমধামে শুরু করেছেন মধু আহরণের কাজ।
প্রশিক্ষণ ছাড়া মধু চাষ শুরু করেন ব্রাহ্মনবাড়িয়ার তারেক। তিনি এখন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মধু চাষের কৌশল শিখেছেন। মৌমাছি এনে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সোনারামপুরে। সরিষা ক্ষেতের চারপাশে মধু আহরণের বক্স সাজিয়ে রেখেছেন।
প্রতিটি বক্সে মাত্র একটা করে রানী মৌমাছি রয়েছে। আর মধু আহরণের জন্য প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক মৌমাছি আসা যাওয়া করছে এসব বক্সে। ২টি খামারে প্রায় শতাধিক বক্স রয়েছে। প্রতিটা বক্স থেকে সপ্তাহে ২ (দুই) থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে প্রতিকেজি মধুর দাম ৬শ’ টাকা।
কথা প্রসঙ্গে মধুচাষী রিমন রহমান বলেন, আমি কোন প্রশিক্ষণ নেইনি, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মধু চাষের বিভিন্ন নিয়ম ও কৌশল দেখি এবং সে অনুযায়ী কাজ (চাষ) শুরু করি। প্রথম গাজীপুর থেকে রানী মৌমাছি নিয়ে ২০১৯-এর অক্টোবরে পরীক্ষামূলক আশুগঞ্জ সোনারামপুরে চাষ শুরু করি।
মধুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে খামারীদের। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ মধু পাঠাচ্ছে তাদের প্রিয়জনদের কাছে।
মধু সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, সরিষা ফুল থেকে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অর্থাৎ চার মাস মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে মৌ চাষ করতে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় মধু খামারীদের। কৃষকরা মৌচাষকে সমস্যা বলে মনে করে। তাদের ধারণা মৌমাছি ফুলের উপর পড়লে ফুলের ক্ষতি হয়। ফুল শুকিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মধুচাষী রিমন বলেন, আমরা তাদের বুঝিয়ে বলি, মৌমাছি ফুলের উপর পড়লে ফুলের পরাগায়ন ঘটায় ফসলটা পুষ্ট হয়। যার ফলে ফসল ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
আশুগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমে আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুরে ১৪শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। মধু চাষীরা ২ মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করবে। তারা সরিষা, ধনিয়া, কালিজিরার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে।
মধু সংগ্রহকারী সূত্রে জানা গেছে, ফসলি জমিতে পোকা-মাকড় দমনের জন্য কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার করেন। এছাড়া কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধও করে থাকে। এসব কীটনাশক পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে মৌমাছির জন্য বেশি ক্ষতিকর। সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে কীটনাশকের কারণে মারা পড়ে অনেক মৌমাছি।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা জমির মালিকদের বলেছি, যেন ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে। এছাড়া মধু চাষীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে উপজেলা কৃষি অফিস।
এএইচ/