ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ধর্মীয় শিক্ষায় সরকার আপসহীন: শিক্ষা উপমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৩৪ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:৩৫ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

সরকার ধর্মীয় শিক্ষার প্রশ্নে আপসহীন উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ইসলামও ততদিন থাকবে। সকলকে সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান নিজের স্বকীয়তা নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার্থীদের  ওপর জোর করে ধর্মীয় অনুশাসন মানতে বাধ্য করা যাবে না। বর্তমান সরকারের আমলে দেশে সকল ধর্মের মানুষ নিরাপদ রয়েছে বলেও তিনি জানান। 

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিবা শাখার ৫৪তম বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের কাছে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সুনাম রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান কখনো মানের প্রশ্নে আপস করেনি। সব সময় ভাল ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা একাগ্রতার সাথে আমাদের সন্তানদের মান সম্মত শিক্ষা দিয়েছেন বলেই এ প্রতিষ্ঠানের এত সুনাম। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের যে নিজস্বতা ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ 

পোশাক পরিবর্তনে আইডিয়াল স্কুলের স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা ও শঙ্কার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন হওয়া দরকার। চিন্তা ও চেতনার গভীরতা বাড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সন্তানদের শালীনতার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবারের পক্ষ থেকে শিক্ষা দিলে তারা নিজ থেকে তা পালন করবে। কিন্তু যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে যে একটি বিদ্যালয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে, সেই অপপ্রচারকারীদের আমরা চিনি।’ 

পোশাক পরিবর্তনে অভিভাবকদের একাংশের আন্দোলনকারীদের প্রতি অপপ্রচার না চালানোর আহ্বান জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘মানববন্ধনের নামে যারা শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তারা জ্বালাও-পোড়াও ও তথ্য প্রযুক্তি মামলার আসামি। তাদের কার্যক্রম সরকারের নজরে আছে। রাস্তায় আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়ে ঘরে ঢুকে সন্তানদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করছেন তারা।’

মন্ত্রী বলেন, ‘মানববন্ধনের নামে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা যদি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা হয়, শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে চাওয়া হয়, তাহলে নিজেরাও ঘরেও শান্তিতে থাকতে পারবেন না। এদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি থাকবে না। মানববন্ধনের নাম করে অরাজকতা করলে সবাইকে তুলে আনা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশে হিংসা, হানাহানি বাদ দিয়ে সহনশীলতার সাথে বাস করতে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রেখে চলতে হবে। নতুন সমাজ, অর্থনীতি ও বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

নওফেল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, এবং মাদ্রাসা খাত উন্নয়নে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ইতিহাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগে কেউ কখনো নেইনি। অতীতে যারাই এসেছেন তারা মুখে মুখে বলে গেছেন, ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন কিন্তু আজ সারাদেশে ৬ হাজার কোটি ব্যয়ে ১ হাজার ৮০০টি মাদ্রাসা নির্মাণ করছে সরকার।’

ভালবাসা ও মানবিকতার মাধ্যমে রাসূল (সা.) দ্বীন প্রচার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জোর জবরদস্তি করে, অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে দ্বীনিকাজে কাজে বাধ্য করা যাবে না। আজকে যারা জোর-জবরদস্তি করে অনুশাসন চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন, সেটা অনুশাসন নয়, দুঃশাসন। যা কখনো চাপিয়ে দেয়া যাবে না।’

‘যারা ধর্মীয় অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা কোন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে সুদ খায় তা আমাদের জানা আছে। কথিত এই রাজনৈতিক গোষ্ঠী পশ্চিমা বিশ্বে কোন কূটনৈতিক পাড়ায় যায় তা আমরা জানি। মুখে মুখে দ্বীনের কথা বলবেন, আবার মাস্তানি করবেন সে দিন শেষ হয়ে গেছে।’ 

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সন্তানদের ওপর সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোচিং ও পাঠদানের নীতিমালা নিয়ে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা মেনে চলবেন। শিক্ষকদের আরও সুযোগ সুবিধা যাতে বৃদ্ধি করা যায়, সে চেষ্টা করছে সরকার।’ 

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বীনের পথ সেটাই যেটা আমাদের সহনশীলতা ও মানবিকতা শেখায়। তোমাদের শাসন মানতে হবে, সুশৃঙ্খল হতে হবে। ব্যক্তি জীবনে শৃঙ্খলার চর্চা না করতে পারলে ভবিষ্যৎ জীবনেও সফলতা পাওয়া যাবে না। তাই, শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে গভর্নিং বডির সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যরিস্টার শাহ আলী ফরহাদ, প্রধান শিক্ষক ড. শাহনারা বেগম, গভর্নিং বডির অন্যান্য সদস্য ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। 

এআই/