ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

যে আমল করলে হায়াত ও রিজিক বাড়ে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৩ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

আল্লাহ তাআলা কুরআনে মানুষকে তার দিকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বহুবার। কোনো বান্দা যদি বেশি বেশি ইসতেগফার পড়ে, নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চায়, দ্বিতীয়বার ভুল না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে আল্লাহ ওই বান্দার হায়াত অভাব মুছে রিজিকে বরকত দেন, যাদের সন্তান-সন্ততি নেই তাদের সন্তান দেন। এভাবে মানুষের কাঙ্খিত চাহিদাগুলো মিটিয়ে দেন। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) অনেক কথা বলেছেন।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু করণীয় আমল রয়েছে যার মাধ্যমে মহান শ্রষ্টার আনুকূল্য পেতে পারি। যেগুলো পালনে আল্লাহ আমাদের উত্তম রিজিক ও নেক হায়াত বাড়িয়ে দেন। 

এ হায়াত ও রিজিক বাড়াতে কোনো দোয়া বা অজিফা পালন করতে হবে না। বিশ্বনবী (সা.) ঘোষণা করেছেন দৈনন্দিন জীবনে ওঠা-বসা, চলাফেরায়, দেখা-সাক্ষাতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা কিংবা তাদের পারস্পরিক খোঁজ-খবর রাখলেই বান্দার রিজিক বেড়ে যাবে এবং বাড়বে নেক হায়াত। হাদিসে এসেছে-

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু দীর্ঘ হোক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বোখারি : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯)। 

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, নিজের ভাই-বোন, চাচা-মামা, খালা-ফুফী ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আল্লাহর নির্দেশ। আর তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা। তাদের কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা। তাদের সঙ্গে আন্তরিক হওয়া। তাদের প্রতি দয়া-মায়া দেখানোই হলো আত্মীয়তার সুসম্পর্ক। যে ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর এতে করেই মানুষের হায়াত লম্বা হয় এবং ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়। 

অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘সে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী নয় যে সম্পর্ক রক্ষার বিনিময়ে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই, যার সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরলে সে তা জোড়া দেয়।’ (বোখারি : ৫৯৯১)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথাও বলে গেছেন, প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার কৃতিত্ব তারই প্রাপ্য যে অন্য পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও নিজের পক্ষ থেকে তা জোড়া লাগায়। পক্ষান্তরে যার সঙ্গে সম্পর্ক বহাল রয়েছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করলে তা হবে সর্বোচ্চ ভালো সম্পর্কের প্রতিদানে ভালো সম্পর্ক। এটি যদিও আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মধ্যেই পড়ে কিন্তু যে ব্যক্তি সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে এমন আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক জুড়বে তার সওয়াব অনেক বেশি এবং তার প্রতিদান অনেক বড়। 

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবদ্দশায় আমার আম্মা মুশরিক থাকতে একবার আমার কাছে আগমন করলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, আমি কি আমার আম্মার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবো? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তুমি স্বীয় মাতার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখো।’ (বোখারি : ২৬২০; মুসলিম : ২৩৭২)।

তাছাড়া আত্মীয়-স্বজন ও মেহমানরা প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ তাআলার রহমত নিয়ে আসে। তাদের প্রতি মনোকষ্ট বা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ কোনোভাবেই ঠিক নয়।

রিজিক ও হায়াত বাড়াতে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া ও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা একেবারেই সহজ কাজ। যা পালনে দুনিয়া ও পারকালের কোনো ক্ষতি নেই। বরং দুনিয়ায় রয়েছে যেমন উপকার তেমনি আখেরাতে রয়েছে উত্তম প্রতিদান। 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রেখে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলার মাধ্যমে নিজেদের রিজিকের প্রশস্ততা ও নেক হায়াত বাড়াতে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এআই/