চীনে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের ফেরাতে আরও অপেক্ষা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৩ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার
করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহরে আটকা পড়া ৪ শতাধিক বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে আরও ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ঢাকাকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এ ভাইরাসের মহাসংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির সরকার এ সময়ের মধ্যে উহান শহরে প্রবেশে সবধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নতুন করে কেউ যাতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত না হতে পারে সে লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৪ বিদেশিসহ অন্তত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা লাখের কাছাকাছি। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরও ১২৯১ জন। চীনের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও নেয়া হয়েছে সতর্ক ব্যবস্থা।
উহান শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাহকিম আনজুম মৃদুলা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের ইউনিভার্সিটিতে আমরা ১২৭ জনের মতো বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী আছি। আমাদের যেন এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ উহানই এখন সবচেয়ে বেশি এই ভাইরাসের শিকার হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘আমাদের ডরমিটরির বাইরে একেবারেই যাওয়া নিষেধ। আমরা টোটাল লকডাউনের (পুরোপুরি অবরুদ্ধ) মধ্যে আছি। আমাদের খাবারের সংগ্রহ খুবই সীমিত। মাস্ক না পরে, এমনকি রুমের বাইরে পর্যন্ত যেতে নিষেধ করা হয়েছে। একটা আতংক কাজ করছে আমাদের মধ্যে। বাতাসে বেরিয়ে আমরা না আবার এই ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হই।"
এ শিক্ষার্থী জানান, ‘দেশে বাবা-মা খুবই চিন্তিত। তারা চাইছেন আমরা দেশে ফিরে যাই। আমরা দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। অপেক্ষায় আছি কখন একটা পদক্ষেপ নেয়া হয়। আমরা সবাই দেশে ফিরে যেতে চাই। যত দ্রুত সম্ভব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।"
রাকিবিল হাফিজ নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, ‘আজ কয়েকদিন ধরে এই ডরমিটরিতে আমরা অবরুদ্ধ। শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছি। এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলের মতো। পাঁচশোর মতো বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী আছে এখানে। আমরা বাংলাদেশিরা ছাড়াও আছে রাশিয়া, কাজাখাস্তান, উজবেকিস্তান, ভারত, পাকিস্তান থেকে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ছেলে-মেয়েরা।’
বিবিসিকে এ শিক্ষার্থী জানান, ‘মাঝখানে আমাদের খাবার পর্যন্ত ফুরিয়ে গিয়েছিল। এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। ইউনিভার্সিটি এই মূহুর্তে বন্ধ, চাইনিজ লুনার ইয়ারের ছুটি। ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে খোলার কথা, কিন্তু শোনা যাচ্ছে এটি পিছিয়ে যেতে পারে।’
বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জানিয়ে তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ দূতাবাস সব তথ্য নিয়ে আমাদের তালিকাভুক্ত করছেন। এখানে যারা মাস্টার্সের ছাত্র, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস যোগাযোগ করছে। কত ছাত্র-ছাত্রী এখন আমরা এখানে আছি টোটাল সংখ্যা জানতে চেয়েছে।’
এদিকে কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার পর সোমবার প্রথমবারের মত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে চীনের মধ্যাঞ্চলের প্রদেশের হুবেইয়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়।
বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বেইজিংকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। এজন্য বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাকি প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের এসব জানান।
সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকেও করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি উত্তরণে কী করা যায়, তা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস নামক নতুন রহস্যময় একটি ভাইরাসের সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা চীনের আরও বেশ কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
সার্স এবং মার্স ভাইরাসের লক্ষণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত চীনেই অন্তত ১০৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অসুস্থ দুই লাখেরও বেশি নাগরিক। এর মধ্যে কয়েকশ রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই উহান প্রদেশের।
তবে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আরও জানিয়েছে, ৫০ হাজার মানুষকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চীন ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ ১১টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। চলমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত বা ভ্রমণরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু রয়েছে। হটলাইনের নম্বর: ৮৬-১৭৮০১১১৬০০৫।
প্রসঙ্গত, ২০০২-২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রায় ৮০০ জন মারা গিয়েছিলেন। করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এআই/