ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ওয়াসার গাড়িচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত

একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৯ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

রাজধানীর ওয়ারীর বলদা গার্ডেন সংলগ্ন রাস্তায় ওয়াসার পানি বহনকারী গাড়ির চাপায় মো. আবির হোসেন (১৫) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আবির ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

গতকাল সোমবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের পরীক্ষার্থীদের জন্য বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সে জন্য সকাল থেকেই পরীক্ষার্থীরা দলবেঁধে সংবর্ধনায় যোগ দিতে স্কুল প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করে। ঠিক তখনই খবর ছড়িয়ে পড়ে আবির হোসেন গাড়ির ধাক্কায় মারা গেছে। এর পর স্কুলের সহপাঠীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে বেশ কিছু সময় যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুসও চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

এ ঘটনায় গাড়ি ও গাড়ির চালক চুন্নু মিয়াকে পুলিশ আটক করেছে।

আবির হোসেনের পারিবারিক সূত্র জানায়, সকালে ৫৩/৪, জয়কালী মন্দিরের নিজের বাসা থেকে বের হয়ে স্কুলের দিকে যেতে থাকে আবির। তার পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও পায়জামা। বলধাগার্ডেনের পাশের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল আবির। ঐ সময় বলধাগার্ডেনের উত্তর পাশের গেটের সামনে ওয়াসার পানির পাম্প স্টেশন থেকে পানি নিয়ে বেপরোয়া গতিতে এসে ওয়াসার লরি আবিরকে ধাক্কা দেয়। এতে সড়কে ছিটকে পড়ে গেলে আবিরের মাথার ওপর দিয়ে উঠে যায় লরির চাকা। এরপর আবিরকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে জানিয়ে দেন, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। পরে আবিরের সহপাঠী ও এলাকাবাসী লরির চালক চুন্নুকে (৪৯) আটক করে পুলিশে দেয়।

পরিবার জানায়, আবিরের মা মিনু বেগম ১১ মাস আগে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আবিরের বড় ভাই ফয়সাল হোসেন পানিতে ডুবে পাঁচ বছর আগে প্রাণ হারায়। আবিরের বাবা হানিফ মিয়া পুরান ঢাকার নবাবপুরে খুচরা যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন। বড় ছেলের মৃত্যুর পর হানিফ মিয়ার বাকি তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোটো ছিল আবির। অন্য দুই জন হলেন লিমা আক্তার ও লিজা আক্তার।

লিমা আক্তার বলেন, আবির আমাদের তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আমার ভাইকে যারা মেরে ফেলেছে তাদের ফাঁসি চাই।

ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ওয়াসার গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। তার এই ঘটনার জন্য আমরা সবাই মারাত্মক ব্যথিত। আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

ডিএমপির ওয়ারী জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরুল আমিন বলেন, আবির ও তার বন্ধু স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে আসছিল। পথে ওয়াসার পানির গাড়ি তাকে চাপা দেয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গাড়ি জব্দ ও গাড়ির চালককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএ/