কল্যাণ ও শান্তির জয়গানে সরস্বতী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:০৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার
আজ বিদ্যাদেবী সরস্বতী পূজা। দুর্গাপূজার মতোই সর্বজীন উৎসব এটি। বিদ্যা, বুদ্ধি ও জ্ঞান লাভের আশায় দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। মূলত শিক্ষার্থীরাই এ পূজার প্রধান আয়োজক। হিন্দু বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উত্সব।
শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে আবহমান কাল থেকে আজও সরস্বতী পূজা পালিত হচ্ছে।
সরস্বতী বিদ্যা, জ্ঞান, শিল্প, কলা ও সংগীতের দেবী। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায় অধ্যায়নরত বিদ্যার্থীরা এই পূজা সাড়ম্বরে করে থাকেন। মাতা সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী। কল্যাণ ও শান্তির জয়গানে, বরদা এবং জাগতিক মোহ ধ্বংসকারী হিসেবে সুপ্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে বিশেষত বেদে আমরা মাতা সরস্বতীকে পাই।
সরস্বতী তাই পুরোপুরি বৈদিক দেবী। বৈদিক ঋষিরা বিভিন্ন ধ্যান মন্ত্রে তার বন্দনা করেছেন। পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মের মুখ থেকে সৃষ্টি। দেবীর সকল সৌন্দর্য্য ও দীপ্তির উত্স মূলত ব্রহ্মা। পঞ্চ মস্তকধারী দেবী সরস্বতী। পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসনকে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়।
পরিবারের সকল সদস্য খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার জামা কাপড় পরিধান করে দেবীর সামনে অবস্থান করে থাকে। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অর্ঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার আরকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্য্য হল পলাশ ফুল। দেবীর অঞ্জলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান।
মার্কণ্ডেয় পুরাণে শ্রীশ্রীচণ্ডী উত্তরলীলায় শুম্ভ নিশুম্ভ নামক অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তির কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল মহাসরস্বতী। এ মূর্তি অষ্টভূজা - বাণ, কার্মূক, শঙ্খ, চক্র, হল, মুষল, শূল ও ঘন্টা ছিল তার অস্ত্র। তার এই সংহারলীলাতেও কিন্তু জ্ঞানের ভাবটি হানি ঘটেনি, কেননা তিনি 'একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা' বলে মোহদুষ্ট শুম্ভকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন।
হিন্দুদের দেবী হওয়া সত্ত্বেও বৌদ্ধ ও জৈনদের কাছেও পূজো পেয়েছেন সরস্বতী। গান্ধারে পাওয়া বীণাবাদিনী সরস্বতীর মূর্তি থেকে বা সারনাথে সংরক্ষিত মূর্তিতে এর প্রমাণ মেলে। অনেক বৌদ্ধ উপাসনালয়ে পাথরের ছোট ছোট মূর্তি আছে তাতে সরস্বতী বীণা বাজাচ্ছেন, অবিকল সরস্বতীমূর্তি।
মথুরায় জৈনদের প্রাচীন কীর্তির আবিষ্কৃত নিদর্শনে সরস্বতীর যে মূর্তি পাওয়া গেছে সেখানে দেবী জানু উঁচু করে একটি চৌকো পীঠের উপর বসে আছেন, এক হাতে বই। শ্বেতাম্বরদের মধ্যে সরস্বতী পূজোর অনুমোদন ছিল। জৈনদের চব্বিশজন শাসনদেবীর মধ্যে সরস্বতী একজন এবং ষোলজন বিদ্যাদেবীর মধ্যে অন্যতমা হলেন সরস্বতী। শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর উভয় জৈন সম্প্রদায়েই সরস্বতীর স্থান হয়ে গেল ব্রাহ্মণ্য ধর্ম থেকে গৃহীতা একজন প্রধান দেবীরূপে।
বাঙালির ঘরে ঘরে যে পূজা আবহমান কাল থেকে হয়ে আসছে, তা হচ্ছে এই সরস্বতীপূজা। দেবী সরস্বতী বিদ্যার দেবী, তাই শিক্ষার্থীদের জন্য আসেন বিদ্যার স্বরূপ হয়ে। বিদ্যা-বুদ্ধিতে সন্তানেরা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে মায়ের আশীর্বাদে, এই দিন তাই সকালে পূজার আয়োজন চলে ঘরে ঘরে। অঞ্জলি আর প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার মণ্ডপ হয়ে ওঠে আনন্দ-উৎসবে মুখর।
এআই/