চীনের সঙ্গে ফ্লাইট সীমিত করেছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:২৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:২৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার
চীনজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছেন প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস। এতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪ বিদেশীসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬২ জনই করোনার উৎপত্তিস্থল উহান শহরের নাগরিক। বাকিগুলো দেশটির অন্যান্য শহরের।
নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স চীনে ফ্লাইট সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে এনেছে। এমনকি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ৭টি এয়ারলাইন্স চীনে ফ্লাইট বন্ধ অথবা সীমিত করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ চীনে তাদের সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চীনে যাওয়া এবং চীন থেকে আসার সব ফ্লাইট (খুব প্রয়োজন ছাড়া) অবিলম্বে স্থগিত করা হলো।
এর আগে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের উদ্দেশ্যে গত ২৪ জানুয়ারি থেকে এয়ার ফ্রান্স তিনটি সাপ্তাহিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেইজিং ও সাংহাইয়ে মধ্যকার সাপ্তাহিক ২৩টি ফ্লাইট চালু আছে।
এদিকে হংকংয়ের উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থা ক্যাথে প্যাসিফিক গতকাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সাথে তারা যোগাযোগ অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনবে। মার্চের শেষ পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে বলছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাথে প্যাসিফিকের সাথে এর সহযোগী সংস্থা ক্যাথে ড্রাগনও একই ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে ফিনল্যন্ডের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা ফিন এয়ার। ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে অনেকগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করে। গত মঙ্গলবার সংস্থাটি জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে বেশকিছু ফ্লাইট আগামি ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে চীনের বেইজিং ও সাংহাইয়ে প্রতিদিন একটি ফ্লাইট, হংকংয়ে দিনে দুটি এবং গুয়ানঝুতে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালু থাকবে।
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম বিমান চলাচল সংস্থা ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার সংস্থাটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সাথে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
আগামি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে। এতে চীনের ১৫টি শহরের সঙ্গে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে সংস্থাটির। প্রতি বছর দশ লাখেরও বেশি চীনা পর্যটক ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করে এবং লাখখানেক শ্রমিক কাজের উদ্দেশে চীন থেকে ইন্দোনেশিয়া যায়।
ফ্রান্স ও ব্রিটিশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, চীনে যাতায়াতের ফ্লাইট কমিয়ে আনছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতার পর উল্লেখযোগ্যহারে যাত্রী কমে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
একইভাবে রাশিয়ার উরালস এয়ারলাইন্স এরই মধ্যে চীনের বেশ কয়েকটি গন্তব্যে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। সংস্থাটি বুধবার ঘোষণা দিয়েছে, ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহর যেগুলো চীনের নাগরিকদের কাছে জনপ্রিয় যেমন- প্যারিস ও রোম, সেসব গন্তব্যেও করোনাভাইরাসের শঙ্কায় উড়োজাহাজ চলাচল সীমিত করছে তারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন জানিয়েছে, গত মঙ্গলবারের তুলনায় গতকাল বুধবার মৃতের সংখ্যা ৩৭ জন বেড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৩০ গুন। উহান শহরের ৪ হাজার ৫৮৬ জন নিয়ে গোটা দেশে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। সময়ের ব্যবধানে তা বেড়েই চলেছে।
চীনের বাইরে সারাবিশ্বে আরও ৯১ জনের দেহে এ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ফলে সতর্ক ব্যবস্থা জোরদার করেছে দেশগুলো। মরণঘাতি এ ভাইরাসে ভারতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির প্রধান ড. মাইক রায়ান বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ বড় হলেও চীন তা মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। আমরা এ ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এখনও দানা বাঁধতে পারে।’
আজ বৃহস্পতিবার ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ‘জরুরি অবস্থায়’ রয়েছে কিনা তা নিয়ে চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর উহানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার পর চীনের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে উহান শহরের এক চিকিৎসাকর্মী দাবি করেছেন, ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেশটিতে ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৭ হাজারেরও বেশি বলে দাবি চীনা কর্তৃপক্ষের।
এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কানাডাসহ অন্তত ১২টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০০২ -২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রায় ৮০০ জন মারা গিয়েছিলেন। করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এআই/এসি