চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৩
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৪ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার
চীনে ভয়াবহ আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে নতুন করে আরও ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৩ জনে। যাদের মধ্যে ২০৪ জনই করোনার উৎপত্তিস্থল উহান শহরের নাগরিক। বাকিরা দেশটির অন্যান্য শহরের বলে জানিয়েছে হুবেই প্রদেশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যাও। উহান শহরের প্রায় ৬ হাজার নাগরিকসহ গোটা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ক্রমাগত তা বেড়েই চলেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবারের চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এ রোগে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশের বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সতর্ক ব্যবস্থা জোরদার করেছে বিভিন্ন দেশ।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইসাস বলেন, ‘এই ঘোষণার মূল কারণ শুধু চীনে কী হচ্ছে তা নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশে কী ঘটছে সেটাও দেখতে হবে।
তিনি বলেন, উদ্বেগের আরেকটি কারণ হলো এই ভাইরাস দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। ড. টেড্রোস ভাইরাসটিকে একটি ‘অভূতপূর্ব প্রাদুর্ভাব’ হিসেবে বর্ণনা করেন যা ‘অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া’ সৃষ্টি করছে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর উহানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার পর চীনের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে উহান শহরের এক চিকিৎসাকর্মী দাবি করেছেন ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেশটিতে ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৭ হাজারেরও বেশি বলে দাবি চীনা কর্তৃপক্ষের।
এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কানাডাসহ অন্তত ১২টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০০২ -২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রায় ৮০০ জন মারা গিয়েছিলেন। করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এআই/