ঢাকা সিটি নির্বাচন: ভোট যুদ্ধ শুরু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:২১ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৮:৩২ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে রাজধানী ঢাকার দুই সিটির পরবর্তী নগরপিতা বেছে নিতে ভোট দেওয়া শুরু করেছেন ভোটাররা। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা চেয়েছে ইসি। একইসঙ্গে ভোটারদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগেরও অনুরোধ করেছে ইসি।
এবারও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন হচ্ছে দলীয় মনোনয়নে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে, বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, একাধিক প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে।
তবে, এবারই প্রথম ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হচ্ছে ইভিএমে। এজন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার ইভিএম।
এদিকে, রাজধানী শহরের বড় এই নির্বাচনকে ঘিরে আগ্রহ দেখা দিয়েছে সব মহলের। গোটা দেশবাসীর চোখই এখন ঢাকার দিকে। ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।
ঢাকার এই দুই সিটি নির্বাচনের প্রচারে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনও সংঘর্ষ হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ২১ দিন অনেকটা নির্বিঘ্নেই প্রচার চালিয়েছেন। তবে পিছিয়ে ছিলেন অন্য প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎসব ভাব বিরাজ করছে।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় ঢাকা উত্তরে ৩৬টি ও দক্ষিণে ৫৭টি ওয়ার্ড ছিল। এবারের দুই সিটিতে ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে বেড়েছে ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যাও। এ নির্বাচনে দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার।
জানা গেছে, এবারে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩ জন মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। আরও রয়েছেন- জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা, ইসলামি আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহারানে সুলতান বাহার।
এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপির তাবিথ আউয়াল। এছাড়াও এ সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন- কমিউনিস্ট পার্টির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)-এর শাহীন খান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ।
প্রার্থী সংখ্যা
ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৩৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। বর্তমানে মেয়র পদে ৬ জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন।
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭ জন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা সবাই চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এই সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে ৩২৬ জন ও সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে লড়াই করছেন ৮২ জন প্রার্থী।
ভোটার সংখ্যা
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটিতে মোট ভোটার ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮ জন ও নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন। সিটি করপোরেশনের হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার রয়েছে ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন ও নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন।
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন ও নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।
ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ
ঢাকার দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র ও ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৫৭টি ভোটকক্ষ এবং দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ৬ হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং দক্ষিণে ৬৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব কেন্দ্র করা হয়েছে। একক হিসাবে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি (১১টি) ভোটকক্ষ রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন মিরপুরের আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়। একই সিটির তেজগাঁওয়ের সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে রয়েছে ১০টি ভোটকক্ষ। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কদমতলীর এ কে হাইস্কুল কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা
ঢাকার দুই সিটিতে এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৭০ জন। এরমধ্যে ২ হাজার ৪৬৮ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ১৪ হাজার ৪৪৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২৮ হাজার ৮৮০ জন পোলিং কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮ জন প্রিজাইডিং, ৭ হাজার ৮৫৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ১৫ হাজার ৭১৪ জন পোলিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ করবেন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে ১ হাজার ১৫০ জন প্রিজাইডিং, ৬ হাজার ৫৮৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ১৩ হাজার ১৭৬ জন পোলিং কর্মকর্তা ভোট নেবেন।
ইভিএম
এবারের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির পুরো নির্বাচনই হবে ইভিএম ব্যবহার করে। এ জন্য ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ভোটারদের প্রশিক্ষিত করতে ডেমোনেস্ট্রেশন ও মক ভোটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকক্ষের বিপরীতে দুটি করে ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের জন্য ২৮ হাজার ৮৭৮টি ইভিএম প্রস্তুত করা হয়েছে। ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ৭০০টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৮টি ইভিএম মেশিন থাকবে।
আরও জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ১৫ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তরে দুই হাজার ৬৩৬ জন এবং দক্ষিণে থাকবে দুই হাজার ৩০০ জন। প্রতিটি কেন্দ্রে দু’জন করে সার্জেন্ট বা করপোরাল বা ল্যান্স করপোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া ৫২ জন জেসিও ও ২৭ জন অফিসারও মাঠে থাকবেন। ইতোমধ্যে দুই সিটির জন্য ৫ হাজার ৫৩৮ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইভিএম-এর কারিগরি সহযোগিতার জন্য উত্তরে ৩৮৪ জন এবং দক্ষিণে ৪৩৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে উত্তরে ৮২ জন ও দক্ষিণে ১৫৮ জন মোবাইল টিমের সদস্য হিসেবে ইভিএম-এর কারিগরি সহযোগিতায় থাকবেন।
এদিকে, ভোট উপলক্ষ্যে পাহারায় গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৫৪টি টিম, পুলিশ ও এপিবিএনের সমন্বয়ে ৫৪টি মোবাইল ফোর্স, ১৮টি স্ট্রাইকিং ও ২৭টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৩৮ প্লাটুন বিজিবি, ৭৬টি র্যাবের টিম, পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৭৫টি মোবাইল ও ২৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে নেমেছে। এ সিটিতে পুলিশের ২৫টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। এছাড়া উত্তরে ৫৪ জন ও দক্ষিণে ৭৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ভোটের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের যানচলাচল নিষিদ্ধ থাকছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল গত ৩১ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ৯ জানুয়ারি। আর এ ভোট উপলক্ষ্যে ১০ জানুয়ারি থেকে প্রচার শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। যাতে মোট ২১ দিন প্রচারের সুযোগ পেয়েছেন প্রার্থীরা।