দিল্লির শাহিনবাগ এখন ঢাকার শাহবাগ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৪৮ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০২:১২ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ঢাকার শাহবাগ। ওই চত্বরে সূচিত হয় তরুণ প্রজন্মের এক শান্তিপূর্ণ সফল আন্দোলন। ঠিক একই ভাবে ভিন্ন ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক প্রতিবাদ চিত্র ফুটে উঠেছে দিল্লির শাহিনবাগে।
সকাল সন্ধ্যা রাত, রোদ কিংবা বৃষ্টি সবকিছু উপেক্ষা করে সেদিন শাহবাগ জেগে ছিল। যে চিত্র এখন দেখা মিলবে শাহিনবাগে। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় প্রবল শৈত্যপ্রবাহও হার মেনেছে দিল্লির প্রতিবাদি মানুষের তেজস্বীর কাছে। প্রায় মাসাধিক কাল অতিক্রম করে আজও সমানভাবে দুর্দমনীয় ও দীপ্যমান শাহিনবাগ।
বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলছে ভারতজুড়ে। বিভিন্ন ভাবে সেখানে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। দিল্লির বিভিন্ন স্থানে এ আন্দোলন দেখা যাচ্ছে। বলতে গেলে, দিল্লির শাহিনবাগ যেন আরেক শাহবাগে পরিণত হয়েছে! ক্রমেই বেগবান হচ্ছে শাহিনবাগের আন্দোলন।
জানা গেছে, শাহিনবাগে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ জন নারী দিয়ে। আজ সেই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে হাজারের অধিক। মুসলিম নারীরা একসঙ্গে এই আন্দোলন চালিয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সর্বধর্মের মানুষ। যা দেখলে মনে পড়ে যায় ঢাকার শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরের কথা। সালটা ছিল ২০১৩। খুব বেশি আগের না। দক্ষিণ এশিয়ার গণআন্দোলনের প্রতীক হয়ে গিয়েছিল শাহবাগ। রাজাকারদের ফাঁসির বিরুদ্ধে এভাবেই রাস্তায় চলে এসেছিল পুরো বাংলাদেশ। বসে পড়েছিল রাস্তায়। একই চিত্র দিল্লির শাহিনবাগেও। প্রথম দিকে সেখানে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গায়ে শাল আর চাদর জড়িয়ে আকাশের তলায় বসে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। শ্লোগানে গলা মেলান সবাই। সঙ্গে ছিল তাদের হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধ ভাই-বোনেরা।
আন্দোলনকারীরা ধর্মের ভিত্তিতে নিজেদের পায়ের জমির অধিকার সরে যেতে দেবেন না। হাতে জাতীয় পতাকা, গলায় জাতীয় সঙ্গীত। এটাই তাদের দেশপ্রেম। কোথাও ছোট শিশু মাইকে গলা ফাটিয়ে ‘আজাদি’ স্লোগানে অবস্থান কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এসব ছবি যেন অনেকদিন পর আবার বিশ্ব দেখছে ভারতে। সুপ্রিম কোর্টের শুনানির আগে তাদের অবস্থান আন্দোলন থেমে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। আর যদি তাতেও কোনো সমাধান না হয়, তাহলে ২৩ মাসের আসিয়ানা থেকে শুরু করে ৯১ বছরের আসমা বিবি সবাই বুকে পুলিশের গুলি খেতেও রাজি।
শাহিনবাগ যেন আজ সিএএ-বিরোধী দেশজোড়া আন্দোলনের সমস্ত শক্তির কেন্দ্র। সেখানে ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সততা ও অদম্য সাহসকে সঙ্গী করে, ‘আজাদি’র স্বপ্নকে বুকে নিয়ে রাজপথের মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন সদ্যোজাত শিশু থেকে নবতিপর বৃদ্ধারাও।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, স্বাধীন দেশে আবার নতুন করে কিসের আজাদি? তাদের কাছে এই আজাদি— সরকারি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে নিশ্চিন্তের খোঁজে।
১৫ ডিসেম্বর থেকে শত শত মুসলিম মহিলা শাহিনবাগ নামে পরিচিত নয়াদিল্লির নিকটবর্তী একটি চৌরাস্তায় এই আন্দেলন শুরু করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধন আইন অনুযায়ী, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। আইনটি সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছে, এদের মধ্যে অনেক বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে শাহিনবাগের বিক্ষোভ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কারণ এটি একটি খন্ডিত সমাজের মহিলাদের নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ সমাবেশে পরিণত হয়েছে।
এসএ/