করোনাভাইরাস
৩শ’ ছাড়ালো মৃতের সংখ্যা, বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন চীন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩৬ এএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৯:৩৭ এএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার
চীনজুড়ে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে নতুন করে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ছে আরও ২ হাজার ৫৯০ জন।
এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩০৪ জনে। অপরদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার ৩৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে প্রাণঘাতি এ করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।
আগেই জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ তাদের আকাশ পথ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করেছে। এবার চীনের সঙ্গে সীমান্ত সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ। এর ফলে মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দেশটিতে।
এদিকে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে এক লাখ দুই হাজারের অধিক লোক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন-এমন সন্দেহে তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তবে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিয়ে চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যে হিসাব দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে ওই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে মৃতের কোনো রেকর্ড না রেখেই তড়িঘড়ি করে মরদেহগুলো সৎকার করার কাজ করছে চীন।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনের উহান শহরে মরদেহ সৎকারের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে তাদের কাছে সৎকারের জন্য যে মরদেহগুলো পাঠানো হচ্ছে তার বেশিরভাগের কোনো রেকর্ড রাখছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
করোনভাইরাসের প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি দেশটিতে বসবাসরত অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। তবে তা আরো ব্যাপক আকারে যাতে না হয় সেজন্য জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ তাদের দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে। গতকালও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ায় নতুন করে দুইজনের দেহে এ সংক্রমনের দেখা মিলেছে। তাদের হাসপাতালে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, যুক্তরাজ্যেও প্রথমবারের মত হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। দেশটিতে বসবাসরত দুই চীনা নাগরিকের দেহে এ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়।
চীনের বাহিরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি থাইল্যান্ডে (১৯ জন)। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায়-১০, কম্বোডিয়ায়-১, কানাডায়-৪, ফ্রান্স-৬, ফিনল্যান্ড-১, জার্মানি-৭, ভারত-১, ইতালি-২, জাপান-১৫, মালয়েশিয়া-৮, নেপাল-১, ফিলিপাইন-১, সিঙ্গাপুর-১৬, দক্ষিণ কোরিয়া-১২, শ্রীলঙ্কা-১, তাইওয়ান-১০, থাইল্যান্ড-১৪, যুক্তরাষ্ট্র-৭, সংযুক্ত আরব আমিরাত-৪, ও ভিয়েতনামে-৫ জনসহ শতকের বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস শনাক্ত করেছে দেশগুলোর স্বাস্থ্য বিভাগ। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে চীনাদের জন্য।
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশগুলো তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে। উহানে বসবাসরত ৩১৪ বাংলাদেশিকে ইতিমধ্যে দেশের আনা হয়েছে। তাদেরর মাঝে ৭ জনকে হাসপাতালে ও বাকিদের রাজধানীর আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
অন্যদিকে, করেনাভাইরাস রোধে মাস্ক সংকটে পড়েছে চীন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় বিশ কোটি মাস্কের অর্ডার দিয়েছে দেশটি। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চললেও এখন পর্যন্ত এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন হয়নি। প্রতিষেধক উদ্ভাবনে নিযুক্ত এক ফরাসি গবেষক জানান, “ওষুধ হাতে পেতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।”
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর উহানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার পর চীনের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ২২টি দেশে ছড়িয়েছে।
তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০০২ -২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রায় ৮০০ জন মারা গিয়েছিলেন। করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এআই/