এবার ফিলিপাইনে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৪০ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে চীনের বাহিরে প্রথমবারের মত একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে এ ভাইরাসে ৪৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি তিনি হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নিজ দেশে ফেরেন।
আজ রোববার ফিলিপাইনে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার প্রতিনিধির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মৃত ওই ব্যক্তি সম্পর্কে দেশটির স্বাস্থ্য সচিব ফ্রান্সিসকো ডিউক বলেন, ‘নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শেষ কয়েকদিন ওনার অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। একইসঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। কিন্ত হঠাৎ করে তার অবস্থার অবনতি ঘটে, ফলে তার মৃত্যু হয়।’
চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে এটাই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা জানিয়ে ফিলিপাইনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রবীন্দ্র অবেয়াসিংহে বলেন, ‘আমাদের মাথার রাখতে হবে এখানেই তিনি এ রোগে আক্রান্ত হননি। তিনি যেখান থেকে ফিরেছেন সেখান থেকে এ ভাইরাস বহন করে নিয়ে এসেছেন। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
মরণ এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৪ জনে। যাদের অধিকাংশই হুবেই প্রদেশের। আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি।
এদিকে প্রাণঘাতি এ করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন। দেশটির সঙ্গে আগেই জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ তাদের আকাশ পথ সাময়িক সময়ের জন্য সীমিত করার পাশাপাশি অনেকে বন্ধও করে দিয়েছেন।
এবার চীনের সঙ্গে সীমান্ত সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ। এর ফলে মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দেশটিতে।
এদিকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ তাদের দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে। উহানে বসবাসরত ৩১৪ বাংলাদেশিকে ইতিমধ্যে দেশের আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জনকে হাসপাতালে ও বাকিদের রাজধানীর আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, গতকালও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ায় নতুন করে দুইজনের দেহে এ সংক্রমনের দেখা মিলেছে। তাদের হাসপাতালে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যুক্তরাজ্যেও প্রথমবারের মত হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। দেশটিতে বসবাসরত দুই চীনা নাগরিকের দেহে এ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়।
চীনের বাহিরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি থাইল্যান্ডে (১৯ জন)। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায়-১০, কম্বোডিয়ায়-১, কানাডায়-৪, ফ্রান্স-৬, ফিনল্যান্ড-১, জার্মানি-৭, ভারত-১, ইতালি-২, জাপান-১৫, মালয়েশিয়া-৮, নেপাল-১, ফিলিপাইন-১, সিঙ্গাপুর-১৬, দক্ষিণ কোরিয়া-১২, শ্রীলঙ্কা-১, তাইওয়ান-১০, থাইল্যান্ড-১৪, যুক্তরাষ্ট্র-৭, সংযুক্ত আরব আমিরাত-৪, ও ভিয়েতনামে-৫ জনসহ শতকের বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস শনাক্ত করেছে দেশগুলোর স্বাস্থ্য বিভাগ। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে চীনাদের জন্য।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
অন্যদিকে, করেনাভাইরাস রোধে মাস্ক সংকটে পড়েছে চীন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় বিশ কোটি মাস্কের অর্ডার দিয়েছে দেশটি। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চললেও এখন পর্যন্ত এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন হয়নি। প্রতিষেধক উদ্ভাবনে নিযুক্ত এক ফরাসি গবেষক জানান, “ওষুধ হাতে পেতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।”
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর উহানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার পর চীনের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ২২টি দেশে ছড়িয়েছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এআই/