সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা উদ্বেগজনক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫৬ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশিদের প্রাণ হারানো বাংলাদেশের জন্য লজ্জা, উদ্বেগ ও দুঃখজনক। এ বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ইতালি সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ। এক বছরে হঠাৎ করে সীমান্ত হত্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা খুব দুঃখজনক। ভারতের সরকার সবসময় আমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, সীমান্তে একজনকেও হত্যা করা হবে না। কিন্তু তারপরও হচ্ছে।’
‘ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে এনে বলেছি। এটা আমাদের জন্য খুব লজ্জাজনক, উদ্বেগের বিষয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এত উন্নত, এর মধ্যে এগুলো (সীমান্ত হত্যা) হবে কেন? আমরা চাই না একটি লোক সীমান্ত হত্যার শিকার হোক।’
অল্প টাকার লোভে অবৈধভাবে ভারতে না ঢোকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশিরা অনেক সময় বিভিন্ন জিনিস ভারত থেকে আনেন। পয়সা কিছু বাঁচানোর জন্য ভারতের ভেতরে আনতে যায় তারা। দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ তারা যেন অল্প টাকার লোভে জীবনটাকে যেন ধ্বংস না করেন। তারা যেন সতর্ক থাকেন। অযথা উসকানি না দেন। অনেক সময় গ্যাং হামলা করে ভারতীয় জওয়ানদের ওপর। তখন কোনো উপায় না দেখে তারা গুলি করে বলেও জানান তিনি।’
ভারত বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে এ হত্যাকাণ্ড চালায় জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন ধরনের যুক্তি থাকে। তাদের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় যারা নতুন নতুন আসেন তাদের সে ধরনের শিক্ষা থাকে না। অনেক সময় আমাদের নাগরিকরা বর্ডার থেকেও ৩০০ মিটার ভেতরে প্রবেশ করে। তখন ওরা (ভারত) বলে, আমরা তো বর্ডারে মারি নাই। তারা আমাদের ভেতরে এসেছে। আমাদের কিছু লোভী লোক অল্প টাকার লোভে গিয়ে জীবন দিয়ে আসে।
তিনি বলেন. ‘কিছুদিন আগে আমাদের বিজিবি ও ভারতের বিএসএফ প্রধান বৈঠকও করেছেন। সেখানে এই প্রশ্ন জোরালোভাবে তোলা হয়। ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডাকা হয়। কিন্তু আমরা পত্রিকায় বারবার বলি না যে, ভারতকে আমরা ডেকে এনেছি। কারণ আমরা সমাধান চাই।’
প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি নওগাঁর পোরশার হাঁপানিয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তিন বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। এর আগের দিন ২২ জানুয়ারি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। গত ৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওয়াহেদপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন দুই বাংলাদেশি যুবক। আহত হন আরও দুজন। মূলত ভারত থেকে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের বন্দুকের মুখে পড়েন তারা।
তার আগে ২ জানুয়ারি বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৫ বাংলাদেশি।
পরিসংখ্যান অনুসারে, গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২০১৯ সালেই। ২০১৬ সালে ২৫, ২০১৭ সালে ১৭ ও ২০১৮ সালে ৩ জন বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম।
এআই/আরকে