ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

দুই মেয়রের যত প্রতিশ্রুতি

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার

নির্বাচনে জয় লাভের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকার দুই নগরপিতা

নির্বাচনে জয় লাভের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকার দুই নগরপিতা

নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দুই সিটিতেই মেয়র নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন সরকারি দল সমর্থিত দুই প্রার্থী। নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যেও অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। বিজয়ীরা নির্বাচনের আগে দিয়েছেন বহু প্রতিশ্রুতি। এবার পালা সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার।

এদিকে, দীর্ঘদিন পর নির্বাচিত নগরপিতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পেলেন নগরীর বাসিন্দারা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও তাদের দেয়া সেসব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন, এমনটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর। 

অন্যদিকে, নিজ নিজ এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে সরকার ও নির্বাচিত মেয়রের সার্বিক সহায়তা চাইলেন নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা।

বরাবরের মতো এবারেও সিটি নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। নির্বাচন শেষ, তাই এবার পালা সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণের। নগরবাসীদের দাবি, যান্ত্রিক এই নগরীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলবেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। নগরের সব সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে -এটাই তাদের প্রত্যাশা।

তার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে-

প্রার্থীদের যত প্রতিশ্রুতি
ঢাকার দুই নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নব নির্বাচিত দুই নগরপিতা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম। 

এরমধ্যে, ৯০ দিনের মধ্যে মৌলিক চাহিদা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস। অন্যদিকে, আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উত্তরের নগরপিতা আতিকুল ইসলাম। 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণকে একটি আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকার দলীয় এ দুই মেয়র। গত ১৩ জানুয়ারি দুই সিটির বিভিন্ন এলাকায় প্রচারকালে ভোটারদের কাছে তারা এসব প্রতিশ্রুতি দেন।

আতিকুলের প্রতিশ্রুতি:
নগরবাসীর জন্য সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। আমাকে যদি আপনারা নির্বাচিত করেন তাহলে সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ। 

মাদকমুক্ত ঢাকা গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, আমরা মাদকমুক্ত ঢাকা গড়তে চাই। যদি নির্বাচিত হই, তবে অবশ্যই ঢাকাকে জলজট, যানজট, মাদকমুক্ত করব।

একটি উপনির্বাচনের মাধ্যমে ৯ মাসের জন্য দায়িত্ব পেয়েছিলাম উল্লেখ করে আতিকুল বলেছিলেন, এবার একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হচ্ছে। দায়িত্বকালে যে সময় পেয়েছি, সেই সময়ের মধ্যে অবশ্যই ঢাকাকে যেভাবে সাজানোর কথা, সেভাবে সাজাতে পারিনি। কিন্তু কিভাবে ঢাকা সাজবে, কিভাবে জলজট-যানজট দূর হবে, কিভাবে আমরা মানবিক ঢাকা গড়তে পারব, কিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে, নারী ও শিশুবান্ধব ঢাকা কিভাবে করা যায় সেই পরিকল্পনা করে ফেলেছি।

খেলার মাঠ দখলমুক্ত করা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত এ মেয়র বলেন, খেলার মাঠ কারও নিজস্ব নয়। মাঠ আমাদের সবার জন্য হবে। আমাদের দরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঘর থেকে বের করে মাঠে নিয়ে আসা। যেখানে যত মাঠ আছে, তা দখলমুক্ত করব। এ সময় তিনি নগরপিতা না, নগরের সেবক হয়ে থাকতে চান বলেও জানান।

তাপসের প্রতিশ্রুতি:
ঢাকা দক্ষিণ সিটির নব নির্বাচিত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, উন্নত ঢাকা গড়তে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছি আমরা। ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা করে আমরা উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব। সেখানে প্রত্যেকটি রাস্তাঘাটের অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয় থাকবে। গুরুত্ব পাবে পয়ঃনিষ্কাশনের বিষয়গুলোও। সব নাগরিকের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে।

গত ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর মানিকনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রচারণাকালে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে ঢাকায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। সুশাসিত ঢাকার আওতায় সব নাগরিকের মৌলিক সুবিধা দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব। দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই ঢাকাবাসীর জন্য কাজ করব। সিটিতে কোনও ধরনের দুর্নীতি বরদাশত করব না।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নত ঢাকা গড়তে নব সূচনার উন্মেষ হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। প্রথম ৯০ দিনের মধ্যেই নাগরিকদের মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকার মধ্যে সব সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করবে। ঢাকার কোনও স্থানে কাজ হলে ৩ বছরের মধ্যে অন্য সংস্থাকে কাজ করতে দেয়া হবে না। এটা বাস্তবায়ন হলে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, সেই দুর্ভোগ থেকে ঢাকাবাসী পরিত্রাণ পাবেন। তিনিও নগরের সেবক হিসেবে ঢাকাকে উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলবেন বলেই প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে, নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলররা। তবে এজন্য, নবনির্বাচিত মেয়র ও সরকারের সার্বিক সহায়তা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

নবনির্বাচিত এক কাউন্সিলর বলেন, 'আমার এলাকায় উন্নয়নে আমি বড় ভূমিকা রাখতে চাই। আমার এলাকার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই উন্নয়নের কাজ বাস্তবায়ন করতে চাই।' আরেক কাউন্সিলর বলেন, 'যে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আমার পুরোপুরি বিশ্বাস, তিনি আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন।'

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ১১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬২টিতেই কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। অন্যদিকে, সংরক্ষিত মহিলা আসনেও এগিয়ে রয়েছেন সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীরা।

নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে থাকা এসব প্রার্থী উন্নয়নের দৌড়ে কতটুকু এগিয়ে থাকেন এটাই এখন দেখার প্রত্যাশায় নগরবাসী।

এনএস/