ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

করোনা ভাইরাস: ঝুঁকিতে ব্যবসা-বাণিজ্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪৪ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার | আপডেট: ১০:৩৮ এএম, ১৬ মার্চ ২০২০ সোমবার

পদ্মা সেতু- একুশে টেলিভিশন

পদ্মা সেতু- একুশে টেলিভিশন

করোনা ভাইরাসের জন্য বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা গোটা অর্থনীতি বড় সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে রফতানিজাত বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামালের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে চীন থেকে। কিন্তু বর্তমানে এসব কাঁচামাল আমদানি বন্ধ। পূর্বের আমদানি করা মজুদ থেকে এখন চললেও সেটা একসময় ফুরিয়ে যাবে। আবার বড় বড় অবকাঠামোতে উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার প্রকৌশলীসহ যন্ত্রপাতিও আমদানি হয় চীন থেকে। এসব প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় আমদানির ক্ষেত্রে চীনের বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। 

অর্থনীতিবীদরা মনে করেন- এই করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের পরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে অনেক খাতের পণ্য, কাঁচামাল সময়মতো আমদানি করা যাবে না। ফলে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ কমে যেতে পারে। আবার রফতানিও ব্যাহত হতে পারে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কিত। কারণ, আমাদের আমদানি-রফতানি দুই ক্ষেত্রেই আমরা চীনের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এ সংকট যদি বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়বে। তিনি মনে করেন, এই সংকটে চীনের পর বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

প্রসঙ্গত: বর্তমানে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী অংশীদার। দেশের আমদানি রফতানি থেকে শুরু করে বাসা-বাড়ি, অফিস, কলকারখানা, যানবাহনসহ সব ক্ষেত্রেই চীনা পণ্য ও সেবা ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব পণ্য দেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি করে বাজারে সরবরাহ করেন। খেলনা, প্লাস্টিক পণ্য, খাদ্য থেকে শুরু করে ভারী শিল্পের মেশিনপত্র, পারমাণবিক যন্ত্রপাতি আমদানি হয় চীন থেকে। এছাড়াও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, বাইসাইকেলের বেশিরভাগ কাঁচামাল আসে চীন থেকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের বড় অংশিদার চীন। এসব প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় পাঁচ লাখ চীনা নাগরিক কাজ করে। যার বড় অংশ ছুটি কাটাতে চীনে অবস্থান করছেন। এসব ব্যক্তি সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসাসহ সামগ্রিক বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত।

পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেলওয়ে সংযোগ, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে, অনেকগুলো শুরুর পর্যায়ে।

জানা যায়, এসব প্রকল্পে কাজ করে এরকম প্রায় দুই’শ চীনা নাগরিক দেশে গিয়ে আটকে গেছেন। যারা এখন আর ফিরতে পারছেন না।

পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দীন আহমদ চৌধুরী গণমাধ্যমে জানান, তাদের প্রকল্পে কাজ করে অর্ধেক চীনা নাগরিক এখন ছুটিতে আছেন। তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু কিছুই করার নেই। এ প্রকল্পে প্রায় ৮শ চীনা নাগরিক কাজ করছে।

বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের প্রাথমিক কাঁচামাল, সুতা, শিল্প কারখানার মেশিনারিজ, রাসায়নিকসহ বিভিন্ন পণ্য চীন থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। যা ওই অর্থবছরের মোট আমদানির ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। এই আমদানির প্রায় ৭০ শতাংশ বস্ত্র, মেশিনারী, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য।

অন্যদিকে চীনে পাট ও পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাংলাদেশ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে।

উল্লেখ্য, প্রাণঘাতি এই করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সবশেষ সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

জানা যায়, দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাণঘাতী ভাইরাসটি চীনের ৩১টি প্রদেশ এবং বিশ্বের অন্তত ২৬ দেশে শনাক্ত হয়েছে। এ খবরের পর বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেইপ্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। সেখানকার এক সামুদ্রিক বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়ায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিল্প কারখানায় আমদানি-রফতানির সকল ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে চীন। ব্লুমবার্গ রিপোর্টে বলা হয়েছে,চীন সরকার ভাইরাস সংকটের কারণে নতুন বছরের সাধারণ ছুটির মেয়াদও বাড়িয়ে দিচ্ছে।