রাজশাহী আ.লীগের সম্মেলন: কে আসছেন নেতৃত্বে?
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:২৫ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার
রাজশাহী আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ইউনিট মহানগরের কাউন্সিল নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিশেষ বর্ধিত সভায় মহানগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির শেষে রাজশাহী মহানগরের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা বেশি। তবে নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদ পেতে নেতাকর্মীদের মনোযোগ আকর্ষণে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য পদপ্রত্যাশীরা পোস্টার ফেলেছেন নগরীর দেয়ালে দেয়ালে। পদ প্রত্যাশীরা তৃণমূলের সমর্থন পেতে ঘুরছেন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে।
মহানগর কাউন্সিল নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনা থাকলেও সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের শঙ্কাও ভর করেছে তাদের মাঝে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলায় যেমন দুর্বল নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে; তেমনি নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে মহানগরেও যদি কর্মী বিচ্ছিন্ন নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ আবার নব্বই দশকের মতো নেতাসর্বস্ব সংগঠনে পরিণত হবে। হতাশায় সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে হাজার হাজার নেতাকর্মী। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীরা চাইছেন কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব যারা কর্মীদের বিপদে-আপদে পাশে থাকবেন।
এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনই থাকছেন এমন কথা জোর দিয়ে বলছেন নেতাকর্মীরা। কারণ এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে রাজশাহীতে লিটনের বিকল্প কাউকেই দেখছেন না তারা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও লিটনের ওপরেই পুরোপুরি আস্থাশীল। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুর রহমান সভাপতি পদ পেতে কেন্দ্রে তবদির ও লবিং শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
দলের একটি সূত্র জানায়, বজলুর রহমান শুধু কর্মী বিচ্ছিন্নই নয়, তিনি একজন গণবিচ্ছিন্ন নেতাও। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। তবে কেন্দ্র থেকে বজলুর রহমানের মতো নেতৃত্বকে চাপিয়ে দেয়া হলে বিষয়টিকে অঘটন হিসেবে দেখবেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা, যেমনটা জেলা কমিটির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি নিয়েই চলছে নানামুখী আলোচনা। দলের ভেতরে ও বাইরেও বিষয়টি নিয়ে সরব নেতাকর্মীরা। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার আবারও ওই পদটি ধরে রাখতে তৎপর রয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, নগর, থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে ডাবলু সরকার নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। এর বাইরে নগর কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব ও দলীয় নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা। লবিং-গ্রুপিংমুক্ত সহজ-সরল মানুষ হিসেবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রানা তৃণমূলেও জনপ্রিয়। আসন্ন নগর কমিটিতে রানাকে তার রানিংমেট হিসেবে পেতে আগ্রহী সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এমন আলোচনা আছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে।
ডাবলু সরকার ও নাইমুল হুদা রানার বাইরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নগর কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান, প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবুর নামও রয়েছে নেতাকর্মীদের আলোচনায়।
সর্বশেষ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয় ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর। ওই কাউন্সিলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নগরীতে আওয়ামী লীগের ৫টি সাংগঠনিক থানা ও ৩৭টি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির মেয়াদ তিন বছর আগেই শেষ হয়েছে। আসন্ন মহানগর কাউন্সিলের আগে অবশ্য থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো নতুন করে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে ২০১৪ সালের কাউন্সিলর দিয়েই এবারের মহানগর কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেই হিসাবে ৩৯৫ জন পুরনো কাউন্সিলর দিয়েই এবার কাউন্সিল হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচন হবে বলে আশা করছি। ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চের প্রথম দিকেই মহানগর কাউন্সিলের তারিখ হবে।