তিন জেলার দায়িত্বে বিআরটিএ বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক!
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:২০ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বাগেরহাট সার্কেলের সহকারি পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহম্মেদ একাই তিনটি সার্কেলের (জেলার) দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের মূল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। যার ফলে বাগেরহাট সার্কেলে সেবা প্রদানে সৃষ্টি হয়েছে ধীরগতি । বিড়ম্বনায় পড়ছেন যানবাহন মালিক ও চালকরা।
বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে বিআরটিএ’র কোনো কার্যালয় ছিল না। বিআরটিএ খুলনা সার্কেল অফিসে যেতে হত বাগেরহাটবাসীকে সেবা নিতে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে বাগেরহাটে বিআরটিএ সার্কেলের পূর্ণাঙ্গ অফিস চালু হয়। এরমধ্যে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাশ হয়। আইনটির প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর পর থেকে যানবাহন মালিক ও চালকরা পূর্বের থেকে অনেক বেশি সচেতন হয়।
এর ফলে বিআরটিএ কার্যালয়ে সেবা গ্রহিতার সংখ্যা পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন শতাধিক লোক বিভিন্ন সেবা নিতে আসতে শুরু করে এখানে। গাড়ির নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস, রুটপারমিটসহ বিভিন্ন সেবা নিতে বিআরটিএতে আসেন বাগেরহাটের মানুষ। চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সেবার জন্য ৩ হাজারের অধিক আবেদন পড়েছে।
একজন সহকারি পরিচালক, একজন পরিদর্শক, একজন উচ্চমান সহকারি, একজন অফিস সহায়ক এবং একজন সিল মেকানিকের পদ রয়েছে এই সার্কেলে। জেলার বিপুল পরিমাণ এই জনগোষ্ঠির সেবা দেওয়ার জন্য এই জনবল যথেষ্ট নয়। এরমধ্যে জানুয়ারি মাস থেকে সহকারি পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে। যার ফলে বাগেরহাট সার্কেলে সেবা প্রদানে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে। বিড়ম্বনায় পড়ছেন যানবাহন মালিক ও চালকরা।
বাগেরহাট শহরের পুরাতন কোর্ট চত্তর এলাকায় বিআরটিএর অফিসে সেবা নিতে আসা কয়েকজন বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইনকে স্বাগত জানিয়ে এবং দায়িত্ববোধ থেকে তারা গাড়ির কাগজপত্র নবায়ন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করছেন। তবে সময় মতো সেবা না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়েছি আমরা।
মোটর সাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করতে আসা শেখ সোহেল হোসেন বলেন, গেল বছর ১৪ নভেম্বর মোটর সাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করতে টাকা জমা দিয়েছি। এখনও আমার কাজটি হয়নি। অনেকবার এসেছি অফিসে। কিন্তু মালিকানা পরিবর্তন না হওয়ায় সড়কে সার্জেন্টরা ঝামেলা করে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, মোটর সাইকেলের ডিজিটাল প্লেটের জন্য অনেক আগে টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনও পাইনি।
আল আমিন নামে আরেকজন বলেন, নতুন গাড়ি কিনেছি। গাড়ির রেজিষ্ট্রেশনের জন্য কত টাকা জমা দেব কোন ব্যাংকে দিব তা জানতে অফিসে এসেছি। কিন্তু এ টেবিল থেকে ও টেবিলে যেতে বলছে। কেউ বুঝিয়ে বলছে না কি করতে হবে।
সময় অনুযায়ী সময় মত তাদের সেবা না পেয়ে বার বার ঘুরছে অফিসে এমন অভিযোগ করেছেন অনেক সেবাগ্রহীতা।
উচ্চমান সহকারি নজরুল ইসলাম বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকেই ১০-২০ বছর পুরনো গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে আসছেন। কিন্তু আমরা লোক কম থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। তারপরও চেষ্টা করছি সেবা গ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
বাগেরহাট বিআরটিএর সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহম্মেদ বলেন, যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস, রুটপারমিট, দুর্ঘটনা রিপোর্টসহ বিভিন্ন কাজ করতে হয় আমাদের এখানে। জানুয়ারি মাস থেকে আমি পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। সপ্তাহে দুই-তিন দিনের বেশি বাগেরহাটে কাজ করতে পারি না। যার ফলে সেবা দিতে কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমাতে বেশিরভাগ সপ্তাহে শুক্র ও শনিবারও কাজ করতে হয় আমাকে।
তিনি আরও বলেন, বাগেরহাট সার্কেলে স্থায়ী জনবল মাত্র চারজন। এর বাইরে একজন সিল ম্যাকানিক রয়েছে। এত স্বল্প জনবলে আমাদের পক্ষে সেবা দিতে কিছু বেগ পেতে হয়। বাগেরহাট সার্কেলের অর্গানোগ্রাম সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জনবল বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন বন্ধ হলে বাগেরহাট সার্কেলে সেবা প্রদান আরও গতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।