ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২৯ ১৪৩১

করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বব্যাপী পণ্য পরিবহন ব্যাহত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৩ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

জানুয়ারিতে চীনের উহান শহরে শুরু হওয়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। 

বিশ্বের ১০টি ব্যস্ততম সমুদ্র সৈকতের মধ্যে ৭টিই চীনে রয়েছে। পাশ্ববর্তী সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়াতে রয়েছে ব্যস্ততম সমুদ্র সৈকত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ নৌপথে পরিবহন হয়। সেখানে চীনে ও পাশ্ববর্তী বন্দরও প্রায় বন্ধ রয়েছে। খবর সিএনএন ও দ্যা গার্ডিয়ান’র। 

পণ্য পরিবহনের এ অবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলো বড় লোকসানে পড়তে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক শিপিং অ্যাসোসিয়েশন বিআইএমকোর প্রধান বিশ্লেষক পিটার স্যান্ড বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্যের সংযোগস্থল চীনের বন্দরগুলোর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ায় শিপিং ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ আন্তঃএশীয় ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় চীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং কন্টেইনারবোঝাই পণ্য পরিবহনের চাহিদা সংকুচিত হয়ে পড়বে।’

গাড়ি, যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে পোশাকসহ অন্যান্য ভোক্তাপণ্য পর্যন্ত সব কিছুই কন্টেইনারে পরিবহন করা হয়। কন্টেইনার শিপিং বিপর্যস্ত হলে এর প্রভাব চীন ছাড়িয়ে বহু দূর গড়াবে। কারণ দেশটি কারখানা বন্ধ রেখে, শ্রমিকদের আবদ্ধ করে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার চেষ্টা করছে।

এই স্বাস্থ্য সংকট যত দিন স্থায়ী হবে, বিশ্বজুড়ে পণ্য পরিবহন তত বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। করোনাভাইরাসে ৫৬০ জনের বেশি মানুষ মরেছে, কমপক্ষে ২৮ হাজার সংক্রমিত হয়েছে, যা মূলত চীনেই ছড়িয়েছে, যেখানকার শহরগুলোতে প্রায় ছয় কোটি মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক পরিসরে যারা খুচরা ব্যবসা করে তারা চীনে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন আসবাব বিক্রির প্রতিষ্ঠান এবং কফির প্রতিষ্ঠান স্টারবাকস্। বেশ কিছু বিমান সংস্থা চীনে তাদের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক হোটেল সংস্থা যারা পৃথিবী জুড়ে হোটেল ব্যবসা চালায়, তারা খদ্দেরদের তাদের হোটেল বুকিংয়ের অর্থ ফেরত দিতে চেয়েছে।

এর ওপর রয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে যেসব পণ্য সরবরাহের সম্বন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসাবে চীনের ভূমিকা রয়েছে, সেগুলো নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সতেরো বছর আগে যখন সার্স নামে শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণের কারণে চীনে বড়ধরনের স্বাস্থ্য সংকটের ঘটনা ঘটেছিল, তার পর থেকে এখন এধরনের পণ্য সরবরাহের নেটওয়ার্কে চীন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি হাইউনডাই তাদের গাড়ি তৈরির কাজ স্থগিত করে দিয়েছে। চীন থেকে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরবরাহের অভাবের কারণে। এর সম্ভাব্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব যে ভবিষ্যতে গাড়ির বাজারে পড়তে যাচ্ছে এটা থেকে স্পষ্ট তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গাড়ি নির্মাণ শিল্পে এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী দেশ হিসাবে চীনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বহু মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার চীনে তৈরি হয়। অনেক ফোন এবং কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ তৈরি হয় চীনে। এই স্বাস্থ্য সংকটের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে শেয়ার ও অর্থবাজারেও। বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে দু সপ্তাহ আগের তুলনায় দরপতন হয়েছে। চীনা নববর্ষের ছুটির পর বাজার খোলার প্রথম দিনে চীনের বাজারে মূল্যপতনের হার আট শতাংশ।

এক বছরের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম সবচেয়ে নিচে নেমেছে। গত দুই সপ্তাহে তেলের দাম পড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। যা চীনে তেলের চাহিদা কমে যাবার প্রতিফলন। চীনের তেল শোধনাগার সাইনোপেক অপরিশোধিত তেলের আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বলে খবরে জানা যায়। তামার দামও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে।

নৌপথে পণ্য পরিবহণকারী আন্তর্জাতিক সমিতির মহাসচিব গাই প্লাটেন বলেন, ‘পণ্য উঠা-নামা কমে যাওয়ায় কিছু পণ্যবাহী জাহাজ চীনের বন্দরে ঢুকতে পারছে না। অনেক জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত কাজের জন্য শ্রমিকদের অপেক্ষায় ডকে আটকে আছে।’

এমএস/এসি