করোনা ভাইরাসে চীনের মৃত্যুর সংখ্যা ৬৩৬ জন ছাড়িয়েছে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩১ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ১০:৩৬ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের দেওয়া তথ্য- সাউথ চায়না মনিং পোস্ট
চীনে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে গতকাল বৃহস্পতিবারই ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই ৬৯ জন। দেশটির সরকারের হিসাবে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোমোট ৬৩৬ জন মারা গেছেন। খবর সাউথ চায়না মনিং পোস্ট’র।
হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোট ৩১,১৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন এর মধ্যে সহস্রাধিকের অবস্থা গুরুতর।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় ৩১৪৩ জন। বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
এ দিন মারা গেছেন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম খবর জানানো চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. লি ওয়েনলিয়াং। ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহানে মারা যান তিনি। গত ১২ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে করোনা ভাইরাসের বিষয়টি ধরা পড়ে ১ ফেব্রুয়ারি। রোগীর দেহ থেকে লির শরীরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
ডা. লি গ্রুপ চ্যাটে সহকর্মী চিকিৎসকদের ভাইরাসটি নিয়ে সতর্ক করে সংক্রমণ এড়াতে ‘প্রতিরক্ষামূলক পোশাক’ পরার পরামর্শ দেন। তবে তখনও তিনি জানতেন না, যে রোগটি ধরা পড়েছে সেটি করোনা ভাইরাস। সতর্ক বার্তা লেখার চারদিন পর পুলিশ তার সঙ্গে দেখা করে এবং একটি মুচলেকায় তার স্বাক্ষর নেয়। যেখানে তার বিরুদ্ধে ‘সামাজিক শৃঙ্খলায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টিকারী মিথ্যা মন্তব্য’ করার অভিযোগ আনা হয়। মুচলেকায় লেখা ছিল, ‘আমরা আপনাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি, আপনি যদি জেদ ধরে এমন অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যান, তাহলে আপনাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
গত ৩০ ডিসেম্বর লি তার সহকর্মীদের ঐ ভাইরাস নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন। করোনা ভাইরাস লক্ষণগুলির মধ্যে আছে- জ্বর হওয়া, পরে শুকনো কাশি, এরপর শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণ ঘটানো। গেল ডিসেম্বরে সংক্রমণের সাতটি ঘটনা পান লি। তার কাছে ভাইরাসটিকে দেখতে সার্সের মতো মনে হয়েছিল। এই ভাইরাস ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারী তৈরি করেছিল। উহানের হুনান সিফুড মার্কেট থেকে সংক্রমিত ধরে নিয়ে ঐ রোগীদের হাসপাতালে অন্যদের থেকে আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
বিশ্বের অনেক দেশই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো চীনগামী ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।
বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও ভয়াবহ কোপ পড়েছে হুবেই প্রদেশে। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে চীনসহ বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত এবং প্রাণহানি যত হয়েছে তার ৯৭ শতাংশ হুবেইতে এবং সব রোগীর ৬৭ শতাংশও সেখানকার।
নতুন এই করোনা ভাইরাস উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে পশুর মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটায়। এরপর মানুষের মধ্যে ব্যাপকহারে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। চীনের নতুন চন্দ্রবর্ষ শুরুর দিন ২৪ জানুয়ারির আগে এটি পুরোপুরি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংকটে সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে বিশ্বের বড় বড় শিপিং কোম্পানি। ফলে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু জাহাজেই নয়, ব্যাহত হচ্ছে আকাশপথে পণ্য পরিবহনও। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সঙ্গে সম্পর্কিত আইএজি কার্গো গত সোমবার অন্তত চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত চীনের মূলভূমিতে কার্গোসেবা বাতিল ঘোষণা করেছে।
এমএস/