কুড়িগ্রাম পৌরসভার উন্নয়ন কাজে হামলা সন্ত্রাসী হামলা, মেয়র লাঞ্চিত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩৪ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার
কুড়িগ্রাম পৌরসভার চাউল বাজার (চকবাজার) সংস্কার কাজে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা এবং মেয়র আব্দুল জলিলকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী হযরত আলী’র নেতৃত্বে একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও দেশি অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এই হামলা চালানো হয়। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন পৌর মেয়র আব্দুল জলিল। ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় পৌর পরিষদ ও পৌর কর্মচারী সংসদ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তাঁরা যৌথ সভা করে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
শনিবারের মধ্যে অভিযুক্ত আসামীদের পুলিশ গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে রোববার থেকে শুরু হবে কর্মবিরতি। এ সময় থেকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ,কঞ্জারভেন্সীসহ সকল নাগরিক সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। পৌর কাউন্সিলর এসোসিয়েশনের সভাপতি ও পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোস্তম আলী তোতা ও পৌর কর্মচারী সংসদের সভাপতি হাফিজুর রহমান বুলু এ সব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র আব্দুল জলিল জানান, কুড়িগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে পৌরসভার মালিকানাধিন সাড়ে ৫০ শতক জমির এক পাশে অবস্থিত পৌর চাউল বাজার (চকবাজার)। এখানে রয়েছে ১৮টি দোকান ঘর ও ৩৪টি ভিটি (খোলা দোকান)। জরাজীর্ণ হওয়ায় এ মার্কেটটি সংস্কারের জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করে দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেয়া হয় ঠিকাদারকে। গত সোমবার পৌর পরিষদ, ঠিকাদার ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে দুপুরে যাই।
এসময় বিএনপি ও জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক হজরত আলী’র একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী সঙ্গে এনে হামলা চালায়। এ সময় আমাকেসহ অনেককে লাঞ্চিত করে। সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে ঐদিনই হযরত আলী, রফিকুল ইসলাম, শেখ বিপুল, মিঠু মিয়া, আব্দুস সালামের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো অনেকের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করা হয়। পুলিশ বুধবার এজাহার ভুক্ত ৩জনকে আটক করলেও অদৃশ্য কারনে রাতের অন্ধকারে ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে আসামীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাঁরা হুমকি-ধামকীসহ বিরুপ মন্তব্য করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ফলে সরকারে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন পৌর মেয়র হিসেবে ঘটনার পরপরই সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোবাইলে অবহিত করি। নিজে ব্যক্তিগতভাবে থানায় উপস্থিত হয়ে এজাহার দাখিল করি। এরপরও আসামীদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আসামীরা প্রকাশ্যেই ঘুরছে,‘ আর বলছে প্রশাসন ম্যানেজ’। বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারকে এঘটনা অবহিত করি এবং পৌর পরিষদ ও পৌর কর্মচারী সংসদ যৌথ সভার রেজুলেশনসহ একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করি। এতো ঘটনারপরও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান বারবার আমাকেই থানায় এসে আসামী পক্ষের সাথে বসে আপস মিমাংসা করার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছেন। যা একেবারেই অনৈতিক প্রস্তাব।
অভিযুক্ত হযরত আলী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি অনেক আগে বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জেলা কমিটিতে যুক্ত ছিলাম। এখন কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত নই। আমার বিরুদ্ধে সব ঘটনা অপপ্রচার। আর বিভিন্ন মামলা’র আসামী করা হয়েছে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে। পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার বা আটক করেনি। গত বুধবার সন্ধ্যায় শরিফ নামে একজন এস আই থানায় ডেকে নেন। আমি, শেখ বিপুলসহ কয়েকজন থানায় গিয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমানের সাথে কথা বলি। ওসি আমাদের বিষয়টি সমঝোতা করে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। পরে আমরা রাতেই বাসায় ফিরে আসি। তিনি দাবী করেন, তারা হামলা না করলেও উন্নয়ন কাজে বাঁধা দিয়েছেন। কারণ এ জায়গা পৌরসভার নয়। আর আমরা ৪০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। আমরা যাবো কোথায়। আমরাও এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পুলিশকে দিয়েছি।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান জানান, এখনও মামলা রেকর্ড করা হয়নি। তবে প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তবে বাদী বিবাদী নিজেরাই আপোষ মিমাংশা করে নিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
কেআই/