করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বিয়ের হিড়িক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:২৯ এএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার
১৯৬১ সাল থেকে ইউনিফিকেশন চার্চে গণবিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়- এএফপি
করোনা ভাইরাসে আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে আবির্ভূত হওয়া এ ভাইরাসে দেশটিতে দিন দিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশত হলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার। শুধু চীনে নয় এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২৮টি দেশে।
চীন থেকে ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজ গুটিয়ে নিয়ে চুপটি মেরে বসে আছে গোটা বিশ্ব। পাশ্ববর্তী দেশগুলোয় আতঙ্ক একটু বেশিই। তবে এর মধ্যে সব আতঙ্ক দূরে ঠেলে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ-তরুণীরা। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক হাজার যুগল গণবিয়েতে যোগ দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সিউলের উত্তরপশ্চিমের গ্যাপিয়াংয়ের চেয়ং শিম পিস ওয়ার্ল্ড সেন্টারে এই অনুষ্ঠান হয়েছে। খবর রয়টার্স ও এএফপি’র।
মাস্ক পড়ে গণবিয়ের এই অনুষ্ঠান গাপিয়ংয়ের ইউনিফিকেশন চার্চে হয়ে গেল এ গণবিয়ের অনুষ্ঠান। বরদের পরনে ছিল স্যুট ও বো টাই, কনেরাও সেজেছিলেন বাহারি গাউনে। কিন্তু সাজে ভিন্নতা থাকলেও বেশির ভাগের মুখেই ছিল মাস্ক। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বেশির ভাগ বর পরেছিলেন কালো মাস্ক, আর বেশির ভাগ কনের মুখে ছিল সাদা মাস্ক। বিয়ে করতে এলেও ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে তো হবে!
বিয়ে করতে এসেও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভোলেননি নবদম্পতিরা- এএফপি
আয়োজকরা বলছেন, এতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার যুগলই প্রথমবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। এতে সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বেশিরভাগ যুগলকে মাস্ক ছাড়াই দেখা গেছে।
১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এ চার্চটি প্রতিষ্ঠা করে মুন নিজেকে ও স্ত্রীকে মেসিয়াহ ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৬১ সাল থেকে ২০০২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার অধীনেই এ গণবিয়ে হতো।
গণবিয়ের অনুষ্ঠানে আগত ২১ বছর বয়সী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যদি বলি যে (করোনা ভাইরাস) সংক্রমণের বিষয়ে আমি মোটেই উদ্বিগ্ন নই, তবে এটি মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু আমার আজ এটা মনে হচ্ছে, আজকের এই দিনে আমি পৃথিবীর সকল ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত।’
ইউনিফিকেশন চার্চের প্রতিষ্ঠাতা সুং মিয়ং মুন। শুক্রবারের অনুষ্ঠানে তার স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তবে অতিরিক্ত জনসমাগম করোনাভাইরাসের বিস্তারের নেপথ্যে কাজ করতে পারে, এমন শঙ্কায় কনসার্ট, অভিভাবক সম্মিলন বাতিল করা হয়েছে এবারের আয়োজনে।
বিশ্বের ৬৪টি দেশের প্রায় ৬ হাজার যুগল অভিন্ন পোশাক পরে অনুষ্ঠানে হাজির হন। যাদের মধ্যে অনেকেই সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রথমবারের মতো মিলিত হয়েছিল। ঘটা করে অনুষ্ঠানস্থলে ছবি তোলেন নববিবাহিত দম্পতিরা। এছাড়া সেখানে উপস্থিত বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনরা তাদের অভিনন্দন জানান।
এদিকে আজ শনিবার পর্যন্ত চীনে ৭২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনে হুবেই প্রদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রায় ৩৫ হাজার। এমনটি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও বিভিন্ন হিসাব বলছে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।
গত ৩১ ডিসেম্বর হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। চীনের বাইরে আরও দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন হংকংয়ের এবং অন্যজন ফিলিপাইনের।
এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায়, বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এমএস/