ভারতকে পর্যদুস্ত করে কিউয়িদের প্রতিশোধ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৫৭ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার
ভারতকে পর্যদুস্ত করে কিউয়িদের প্রতিশোধ
৫-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল ভারত। বদলা হিসেবে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিল নিউজিল্যান্ড। আর তার ফলে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল কিউয়িরা।
আজ শনিবার দ্বিতীয় ওয়ানডে-তে ৫০ ওভারে কিউয়িরা করেছিল ৮ উইকেটে ২৭৩ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৩ ওভারে ভারত শেষ হয়ে যায় ২৫১ রানে। অবশ্য রবীন্দ্র জাদেজা ও নবদীপ সাইনি মরিয়া হয়ে না লড়লে ভারত আরও আগেই হয়তো শেষ হয়ে যেত।
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে উইকেট হারিয়ে এক সময়ে প্রবল চাপে পড়ে ভারত। সেই জায়গা থেকে পাল্টা মারের খেলা শুরু করেন জাদেজা ও সাইনি। জাদেজার লড়াই ক্রিকেটভক্তদের মনে করিয়ে দিচ্ছিল বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের কথা। সে দিনও তিনি ভারতকে জেতাতে পারেননি। এ দিনও পারলেন না।
ভারতের টপ অর্ডার ব্যর্থ। মিডল অর্ডারও আসল সময়ে ভেঙে পড়ল। রবি শাস্ত্রী-বিরাট কোহলিদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। জিততে শুরু করলে চোখে পড়ে না দলের দুর্বলতা। হারলেই বোঝা যায় রক্তাল্পতা ঠিক কোন জায়গায়।
২৭৩ এমন কিছু রান ছিল না। ভারতের ছিল কোহলির মতো ব্যাটসম্যান। শ্রেয়াস আইয়ার ছন্দে ছিলেন। তবুও কেন হারতে হল? কারণ নিশ্চয় অনুসন্ধান করবে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট।
রস টেইলর-মার্টিন গাপটিলরা এদিনও পাহাড়সম রানের বোঝা চাপিয়ে দিতেই পারতেন ভারতের উপরে। তাদের তিনশোর নীচে আটকে রাখার পিছনে ভারতীয় বোলারদের যেমন কৃতিত্ব রয়েছে, তেমনই কিউয়ি ব্যাটসম্যানরাও ‘হারাকিরি’ করে বসেন মিডল অর্ডারে। রান আউট হলেন তারা, উইকেট ছুড়ে দিলেন। পর পর যখন উইকেট যাচ্ছে তখন মাথা ঠান্ডা রাখেন এক রস টেইলর।
প্রথম ওয়ানডেতেও সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন তিনি। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে অভিজ্ঞ টেইলর মোক্ষম সময়ে ইনিংসের হাল ধরেন। শেষ পর্যন্ত ৭৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। টেইলরের চওড়া ব্যাট নিউজিল্যান্ডকে পৌঁছে দিয়েছিল লড়ার মতো জায়গায়।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ম্যাচে দু’টি পরিবর্তন আনে ভারত। কুলদীপের বদলে যুজবেন্দ্র চাহাল এবং মহম্মদ শামির বদলে নবদীপ সাইনিকে নামানো হয়েছিল।
আগে ব্যাট করতে নেমে দুই কিউয়ি ওপেনার হেনরি নিকোলস ও মার্টিন গাপটিল শুরুটাও দারুণ করেন। ৫৯ বলে ৪১ রানে ফেরেন নিকোলস। নিকোলস যখন ফেরেন, তখন স্কোর বোর্ডে ৯৩ রান তুলে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙেন যুজবেন্দ্র চহাল।
তিন নম্বরে নামা ব্লান্ডেল অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২২ রানে তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরান শার্দুল ঠাকুর। মার্টিন গাপটিল দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। চলতে শুরু করলে তাকে থামানো কঠিন। ৭৯ বলে ৭৯ রান করে রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু শার্দুল ঠাকুরের থ্রোয়ে তাকে রান আউট হতে হয়। আটটি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কায় সাজানো ছিল গাপটিলের ইনিংসটি।
এই ওপেনার ফেরার পরেই হঠাৎই ভেঙে পড়তে শুরু করে কিউয়িদের মিডল অর্ডার। লাথামকে (৭) এলবিডব্লিউ করলেন জাদেজা। নিশাম (৩) রান আউট হলেন। গ্র্যান্ডহোমি (৫), চ্যাপম্যান (১) ও সাউদি (৩) দ্রুত ফিরে যাওয়ায় চাপ অনুভব করতে শুরু করে দেয় নিউজিল্যান্ড।
এই সময়ে ইনিংসের হাল ধরেন টেইলর ও জ্যামিসন (২৫)। নবম উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যান ৮.৩ ওভারে গড়েন ৭৬ রানের পার্টনারশিপ। এই পার্টনারশিপই কিউয়িদের ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেয়।
জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার শুরুটা ভাল করতে পারেননি। পৃথ্বী শ'কে বোল্ড করেন জ্যামিসন। ১৯ বলে ২৪ রান করেন তিনি। ছ’টি বাউন্ডারি মারেন এসময়েই। মায়াঙ্ক আগারওয়াল টেস্টে দারুণ সফল। এদিন তিনি ব্যাট হাতে ব্যর্থ। মাত্র ৩ রান করে আউট হন মায়াঙ্ক।
এরপরই ফেরেন বিরাট কোহলি, ১৫ রানে বোল্ড হন সাউদির বলে। ভারত অধিনায়কের ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক। গ্র্যান্ডহোমির বল কাট করতে গিয়ে উইকেটে টেনে আনলেন লোকেশ রাহুল (৪)। শ্রেয়াস আইয়ার প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এদিনও ৫২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। মিডল অর্ডারে কেদার যাদব (৯) ব্যর্থ। শার্দুল ঠাকুরের ব্যাটিংয়ের হাত ভাল। তিনি ১৮ রান করে ফিরে যাওয়ার পরে চাপ বাড়তে থাকে ভারতের উপরে।
এমন সময়ে জাদেজা ও নবদীপ লড়াই চালিয়ে যান নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সাইনি ৪৯ বলে ৪৫ রানের প্রয়োজনীয় ইনিংস খেলেন। সাইনি ও জাদেজা যখন লড়াই করছেন, তখনও মনে হচ্ছিল ভারত ম্যাচটা হয়তো বের করে নেবে।
সাইনি ফেরার পরেও লড়ছিলেন জাদেজা ও চাহাল। তবে চাহাল (১০) অন্ধের মতো দৌড়তে গিয়ে রান আউট হলেন। জাদেজা (৫৫) ফিরতেই ভারতের ভক্তদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে যেমন ছন্দহীন দেখিয়েছে, ওয়ানডেতে ঠিক ততটাই গোছানো লাগছে স্বাগতিকদের। আগের ম্যাচে সাড়ে তিনশ টপকে সিরিজে ১-০ এগিয়ে থাকায় আত্মবিশ্বাসী ছিল কিউয়িরাই। তাদের ব্যাটিংয়েও সেই ছাপ দেখা যায়। ওয়ানডে সিরিজে ভারতের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে এখন। অতীতে এই রকম পরিস্থিতি থেকে বিরাট কোহালিরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সিরিজও জিতে নিয়েছিল। কিন্তু এবার আর পারল না।
এনএস/