বেনাপোল চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে ট্রাক শ্রমিকদেরও
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৮:৪৯ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার
করোনাভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ৪টি মেডিকেল টীমে রয়েছেন ৩৬ জন চিকিৎসক ও নার্স। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার ৪ জন, মেডিকেল সহকারী ৮ জন, স্বাস্থ্য সহকারী ২০ জন ও নার্স ৪ জন। তারা পর্যায়ক্রমে ভারত থেকে আসা দেশি বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী, ট্রাক চালক ও শ্রমিক এবং প্রতি বৃহস্পতি ও রোববার রেলস্টেশনে রেলপথে যাতায়াতকারী পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
জনবলের অভাবে প্রথম দিকে একটু সমস্যা হলেও বর্তমানে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ভারত থেকে আসা শতভাগ পাসপোর্টযাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া ইমিগ্রেশনের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ইমিগ্রেশনে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে মাঝে মধ্যে ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক-শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হচ্ছে একই নিয়ম। বেনাপোল রেল স্টেশনে এখনও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা না হলেও আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে বলে জানান শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অশোক কুমার সাহা।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভরসা সেই তিনটি হ্যান্ডডিটেক্টর থার্মোমিটার। থার্মাল স্ক্যানারের মনিটরটি এখনও পুনঃস্থাপন না করায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে সেটি কাজে আসছে না। এর আগে সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে বসানো হয়েছিল অত্যাধুনিক এই থার্মাল স্ক্যানারটি। এই স্ক্যানারের মাধ্যমে খুব সহজেই অতিরিক্ত তাপমাত্রাসহ শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব। করোনা ভাইরাস নির্ণয়েও এটা ব্যবহারযোগ্য। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে স্ক্যানারের মনিটরটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ নিয়ে বারংবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো ফল মিলছে না।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন বলেন, মনিটরটি বিকল থাকায় থার্মাল স্ক্যানার পরিচালনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হলেও রোগ শনাক্তের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে না। কারণ অতিরিক্ত তাপমাত্রাবাহী কেউ স্ক্যানার অতিক্রম করলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই স্ক্যানারের আলো জ্বলে উঠবে এবং সিগন্যাল দেবে। এ ছাড়া বিকল্প হিসেবে তারা তিনটি হ্যান্ডডিটেক্টর থার্মোমিটার দিয়েও পরীক্ষা করছেন।
তিনি আরও জানান, স্ক্যানারের মনিটরটির ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানোর পর কারিগরি একটি টিম সেটি দেখে গেছে। খুব শিগগির ঢাকা থেকে নতুন মনিটর পাঠানোর আশ্বাসও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। হয়তো প্রক্রিয়াগত কারণে পাঠাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। বেনাপোল স্থলবন্দরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো দেয়া হবে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে গত ১৭ জানুয়ারি পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হলেও সীমান্ত অতিক্রম করে আসা সব যাত্রীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছিল না। আর ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের চালক-শ্রমিকরা ছিলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার একেবারেই বাইরে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তবে এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ ভারতীয় ট্রাকচালক-শ্রমিক বাংলাদেশ প্রবেশ করলেও পরীক্ষা করা হচ্ছিল স্বল্পসংখ্যক চালক-শ্রমিককে। বর্তমানে আমদানি-রফতানিবাহী ট্রাকগুলোর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভারত-বাংলাদেশ নোম্যান্সল্যান্ডে ও বাইপাস সড়কে দু‘টি টিম কাজ করছে। রেল স্টেশনেও একটি মেডিকেল টিম কাজ করবে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসানুজ্জামান জানান, সরকারি নির্দেশনার পর ভারত সীমান্ত হয়ে আসা সব পাসপোর্টযাত্রী ও ট্রাকচালক-শ্রমিকদের হ্যান্ডডিটেক্টর থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। শুধু শনিবার পরীক্ষা করা হয়েছে তিন হাজার ৯৪৬ জনকে। তবে এ পর্যন্ত ভারত থেকে আসা কোনো পাসপোর্টযাত্রীর দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, ভারতীয়রা ছাড়াও এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় আসাদের মধ্যে আইরিশ, অস্ট্রেলিয়ান, কানাডিয়ান, আমেরিকান, ব্রিটিশ ও নেপালি কয়েকজন রয়েছেন।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের অফিসার ইনচার্জ খোরশেদ আলম জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে কোনোভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতা করছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। বিশেষ করে কোনো চীনা নাগরিক অথবা চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তারা অধিক সতর্কতা রাখছেন।
যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অশোক কুমার সাহা বলেন, স্থানীয় শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি বিশেষ 'আইসোলেশন' ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হলে সর্বপ্রথম তাকে সেখানে নেওয়া হবে। এ ছাড়া পারসোনাল প্রটেকটিভ জিনিসপত্রসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বেনাপোল চেকপোস্টের মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. বিচিত্র মল্লিক বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বেনাপোল চেকপোস্টে শুরুতে তিনটি টিম কাজ করছিল। এখন টিমের সংখ্যা চারটি করা হয়েছে। প্রত্যেক টিমে একজন মেডিকেল অফিসার থাকছেন। টিমগুলো ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও পণ্যবাহী পরিবহন প্রবেশদ্বারে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। আর প্রতি বৃহস্পতি ও রোববার রেল স্টেশনে বন্ধন এক্সপ্রেসে চলাচলকারী যাত্রীদের মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, আমরা যদি শুধু ভারত থেকে আগত পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি তাহলে শত ভাগ পরীক্ষা করা হবে না। কারন আমদানি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাকের চালক ও শ্রমিকরাও ‘করোনাভাইরাসের’ জীবানু বহন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। সে লক্ষে আমরা বন্দর থেকে ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার দুটি গেটে মেডিকেল টিম বসিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বন্দরের সব প্রবেশ দ্বারে যাতে দেশ বিদেশি যাত্রী ও ভারতীয় ট্রাক চালকদের নিয়মতি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভ্রমণ, চিকিৎসা ও বাণিজ্যিক কাজে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। গত ১৭ জানুয়ারি থেকে এপথে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে দাবি তাদের। এসব যাত্রীদের মধ্যে ১২ শতাংশ রয়েছে বিদেশি যাত্রী। এছাড়াও আমদানি-রফতানি কাজে শতশত ট্রাক চালক, শ্রমিক, সিএন্ডএফ এজেন্টের লোকজন যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে রেল পথেও কয়েকশ‘ যাত্রী যাতায়াত করছেন।
আরকে//