সান্ধ্য আইনে বন্দী নোবিপ্রবির খাদিজা হলের ছাত্রীরা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৪৮ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) সান্ধ্য আইনে বন্দী হযরত বিবি খাদিজা হলের ছাত্রীরা। ছেলেদের হলে ফেরার নির্দিষ্ট কোনো সময় না থাকলেও ছাত্রীদের ক্ষেত্রে হলে ফেরার দৃশ্যটা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। ছাত্রীদের সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই হলে ফিরতে হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য আইন নামে পরিচিত। তবে এ আইনটি বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হযরত বিবি খাদিজা হলে বেশি আরোপিত।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাত্রীরা হলে না ফিরতে পারলে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে জরিমানা নেওয়া ও তাদের অভিভাবককে ফোন দিয়ে দেরি করে হলে ফেরার কথা জানানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এভাবেই সান্ধ্য আইনে বন্দি নোবিপ্রবির খাদিজা হলের ছাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো কারণে কোনো ছাত্রী হলে ফিরতে দেরি করেন, তাহলে হল গেটে থাকা খাতায় তাকে নাম ও রুম নম্বর লিখে আসতে হয়। যাতে হল কর্তৃপক্ষ পরে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে ওই ছাত্রীকে জেরা করতে পারেন। এদের মধ্যে যারা সন্ধ্যার পর টিউশনে যান তাদেরকেও নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হয়।
হল সূত্রে জানা যায়, কোন শিক্ষার্থী টিউশনি করে ফিরতে দেরী হলে "হল প্রভোস্ট " তাদেরকে ধমক দেন এবং টিউশনি করতে নিষেধ করেন। আবাসিক ছাত্রীদের প্রভোস্ট বলেন, হলে থাকলে কেন টিউশনি করতে হবে? এসব কথা বলে হলের ছাত্রীদের টিউশনির বিরুদ্ধাচরণ করেন প্রভোস্ট।
এছাড়াও তিনি নোটিশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বারবিকিউ সহ বিভিন্ন পার্টিতে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এতে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে রয়েছেন। তবে জানা যায়, রীতিমতো গুটিকয়েক শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মগুলো সীমাবদ্ধ রয়েছে নোটিশেই। ফলে প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনিয়ম করেই হলে ঢুকছেন এসব শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক ছাত্রী বলেন, ‘সান্ধ্য আইনের কারণে আমরা সন্ধ্যার আগেই হলে ফিরে আসি। কোনো কারণে যদি এক দিন সাতটার পরে হলে ফিরি তাহলে আমাদের নানারকম কৈফিয়ত দিতে হয়। কোনো কাজের কারণে দেরি হয়েছে বললে আমরা কেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারিনি এমন প্রশ্ন করা হয়।’
এছাড়া গেটে একটি হাজিরা খাতা রাখা আছে। যেখানে প্রহরীদের কাছে আমাদের নাম, রুম নম্বর, মোবাইল নম্বর লিখে রেকর্ড জমা দিতে হয়। কর্তৃপক্ষের লোকজন বাড়িতে ফোন দিয়ে দেরি করে ফেরার কথা বলে দেবে বলেও অনেক সময় হুমকি দেয়। এছাড়াও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাশ্ববর্তী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীরা রাত ৮ টা পর্যন্ত হলের বাইরে থাকার অনুমতি থাকলেও আমাদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ধরনের আইন চলতে পারে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রভোস্ট ড. আতিকুর রহমান বলেন, দৈনন্দিন হলে ঢুকার শেষ সময়টি বেঁধে দেয়া অনেক আগে থেকেই । তবে শিক্ষার্থীদের কোন যৌক্তিক দাবি থাকলে আমরা হল প্রশাসন তা বিবেচনা করবো।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, দুইটা হলের ক্ষেত্রে দুই ধরনের নিয়ম চলছে সেটা আমার এতদিন জানা ছিল না। তবে বিষয়টা যেহেতু এখন নজরে এসেছে এই বিষয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জরিমানা আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই।
কেআই/আরকে