ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

বেসিস সফটএক্সপো ২০২০

পর্দা নামলো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনীর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫২ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে ৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ১৬তম বেসিস সফটএক্সপোর পর্দা নেমেছে রবিবার রাতে, জমকালো আয়োজন আর পুরষ্কার বিতরণির মধ্য দিয়ে।
 

প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করে ১৬তম বেসিস সফটএক্সপো'র সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।
 
তিনশ সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিতে এবারের বেসিস সফটএক্সপো ২০২০ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আইসিটি এক্সপো হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ বছর সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করেছেন বেসিস সফটএক্সপো-এর ১৬তম আসরে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নজরকাড়া লেজার শো, এলইডি ড্যান্স এবং স্যান্ড আর্ট প্রদর্শনী হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, তথ্যপ্রযুক্তির পালাবদলে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহের অবদান এবং স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বেসিস আয়োজিত বেসিস সফটএক্সপো'র সাফল্য তুলে ধরা হয় সেখানে। 

অনুষ্ঠানে সরকার ও বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তিখাতের অংশিদারিত্বের অংশ হিসেবে উদ্বোধন করা basisegovhub.info। উক্ত পোর্টালে সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন, সরকারি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের টেন্ডারের বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং টেন্ডারের অংশগ্রহণে যাবতীয় তথ্য খুঁজে পাবেন। পোর্টালটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, এটুআই-এর সাথে যৌথভাবে তৈরি করেছে বেসিস। এটুআই-এর পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন চিফ ই-গভার্নেন্স স্ট্র্যাটেজিস্ট জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ এবং বেসিস পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেসিস পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক।

বেসিস সফটএক্সপো ২০২০ এর আহবায়ক এবং বেসিস-এর সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী লগ্নে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সহায়ক হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার বেসরকারি খাতের তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন বেসিস সফটএক্সপো ২০২০ আয়োজন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। বেসিস এর ইতিহাসে প্রথমবারের মত সফটএক্সপোতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মেলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয় এবং সকল এক্সিবিটর মেলার আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবং বেসিস সফটএক্সপো ২০২০'র যুগ্ম আহবায়ক ফারহানা এ রহমান বলেন, এবারের আসরে আমরা সারাদেশ থেকে প্রচুর সাড়া পেয়েছি। দেশ-বিদেশ থেকে বক্তারা এসেছেন। নারী উদ্যেক্তাদের জন্য ছিল উইমেন জোন। শিক্ষার্থীরা  প্রতিটি স্টলেই সিভি জমা দিয়েছে। আগত সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থীর মধ্যে বেসিস সফটএক্সপো'র মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৪২ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বেসিস সভাপতি জনাব সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, দেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্প্রসারণে এই এক্সপোর আয়োজন করা হয়। এতে তিনশো প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। চারদিনে আমরা নানা আয়োজনে দেশে এবং বিদেশে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তুলে ধরতে সফল হয়েছি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নারীদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে উইমেন জোন থেকে সেরা এক্সিবিটর হিসেবে পুরষ্কার পেয়েছে এলিগ্যান্ট আইটি লিমিটেড। পাশাপাশি, সেরা প্যাভিলিয়ন নির্বাচিত হয়েছে সফটওয়্যার শপ লিমিটেড- এসএসএল ওয়্যারলেস, ২য় হয়েছে জুপিটার টেকনোলজিস প্রাইভেট লিমিটেড, ৩য় হয়েছে আইসিসি টেলিসার্ভিসেস। সেরা মিনি প্যাভিলিয়ন নির্বাচিত হয়েছে রেড ডট, ২য় হয়েছে আম্বালা আইটি, ৩য় হয়েছে টিকন সিস্টেম লিমিটেড। সেরা স্টল নির্বাচিত হয়েছে এক্সপ্রেস সিস্টেম লিমিটেড, ২য় হয়েছে  ব্র্যাক নেট, ৩য় হয়েছে কম্পিউটার গ্রাফিক্স অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড।  

মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জে এ এন এসোসিয়েটস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল এইচ কাফি ও লিডস কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শেখ আব্দুল আজিজকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। 

পাশাপাশি, সামগ্রিক আয়োজন সফল করতে বেসিস সফটএক্সপোর পৃষ্ঠপোষক- প্লাটিনাম ¯পন্সর ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সিলভার ¯পন্সর ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক লিমিটেড-ইউসিবিএল, ফিনটেক জোন পার্টনার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড-ইবিএল, এক্সিপেরিয়েন্স জোন পার্টনার-সফটফি টেক লিমিটেড ও এইট্টি এইট ইনোভেশনস, প্রজেক্ট শোকেসিং জোন পার্টনার আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, আউটসোর্সিং কনফারেন্স পার্টনার ব্যাংক এশিয়া, পেওনিয়ার, সিএক্সও লিডারশিপ মিট পার্টনার ব্র্যাক ব্যাংক, ইন্টারনেট পার্টনার আমরা, লাইভ স্ট্রিমিং পার্টনার ঢাকা লাইভ, বেসিস সফটএক্সপো এর পার্টনার আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং অনুষ্ঠান সহযোগীদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। 

বেসিস সফটএক্সপো ২০২০-এর নতুন সংযোজন প্রজেক্ট ইনোভেশন জোনের ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫টি প্রকল্পের মধ্যে শীর্ষ ৫টি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশিয় সফটওয়্যার নির্মাতাদের জন্য বেসিস সফটএক্সপো এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্ম। স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নিরলস অবদানের কারণেই। বেসিস সফটএক্সপো স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তুলে ধরেছে। সরকারি-বেসরকারি খাতে দেশি সফটওয়্যারের গুণগত আর কৌশলগত মান তুলে ধরতে বেসিস কাজ করে যাবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান অতিথি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বেসিস একে অপরের সাথে জড়িত। গত ১১ বছরে সরকার যতগুলো নীতি গ্রহণ করেছে তার সবগুলোই বেসিসের সঙ্গে আলোচনা করেই করেছে। বাংলাদেশ আজ সফটওয়্যার রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ৫৬টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেখা গেছে সরকারের ৯০ শতাংশ সেবার ডিজিটাল রূপান্তরের প্রথম ধাপে গৃহীত ২৮০০ সেবার ডিজিটাল করণের অভিযাত্রায় ৬০০ সেবা ইতিমধ্যে রয়েছে। আরো ২২০০ সেবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে আনার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আইসিটি বিভাগ, এটুআই এবং বেসিস সমন্বিত ভাবে কাজ করার ফলে এসব সেবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে আনা গেছে। যে সফটওয়্যার দরকার তা বিদেশ থেকে আমদানী না করে, দেশের তথ্য বিদেশী কোম্পানির কাছে হস্তান্তর না করে দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমেই দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। পাইলট প্রকল্প দিয়ে বেসিস সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ৫ বছরের মধ্যে উইপ্রো, ইনফোসিস এর মতো বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হবে। এর প্রথম উপহার বেসিস ই-গভঃ হাব। আগামী ২ বছরে সরকারের যে দুই হাজার কোটি টাকার সফটওয়্যার প্রয়োজন হবে তা দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে করা হবে।

অনুষ্ঠানের শেষে শুরু হয় মনোজ্ঞ কনসার্ট এবং আতশবাজি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বেসিস এর সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ ও পরিচালক দিদারুল আলম।

সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে মেলার শেষ দিনেও ১০টি জোনের প্রতিটিই ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রতিটি জোনেই ছিল জনস্রোত। এমন জনসমারোহে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রদর্শকেরা।

কেআই/এসি