বুধবার শুরু হচ্ছে জাতীয় নাট্যোৎসব ২০২০
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩০ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানভুক্ত চার শতাধিক নাট্য সংগঠনের অংশগ্রহণে ৬৪ জেলায় একযোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে “জাতীয় নাট্যোৎসব ২০২০”। আগামিকাল ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত 'জাতীয় নাট্যোৎসব' চলবে।
উৎসবের প্রতিবাদ্য বিষয় হল-“জঙ্গিবাদ-অবক্ষয়-দুর্নীতি, মানবে না এ সংস্কৃতি”। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের আয়োজনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এই নাট্যোৎসব নতুন এক দিগন্তের সূচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন আয়োজকেরা।
সর্ববৃহৎ এই নাট্য উৎসব উদ্বোধন করার জন্য সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় সরাসরি ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট হতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এছাড়াও প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীদের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একযোগে প্রচারিত হবে।
আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরতে ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন ফেডারেশানের চেয়ারম্যান ও একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
তিনি জানান, সারাদেশে চার শতাধিক নাট্যদলের ত্রিশ হাজারেরও বেশি নাট্যকর্মী এই উৎসবের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ১২-২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উৎসবে ৩০২টি নাটক প্রদর্শিত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পথনাটক পরিবেশিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ফেডারেশানের সেক্রেটরি জেনারেল কামাল বায়জিদসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব বদরুল আনম ভুইয়াসহ বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী মঞ্চনাটকের উপর থেকে প্রমোদ কর বাতিল করেন ১৯৭৪ সনে। তাঁরই সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই নাটকের উপর থেকে দীর্ঘদিনের কালাকানুন সেন্সর প্রথা বাতিল করেন। বর্তমান সাংস্কৃতিবান্ধব সরকার নাট্যকর্মীদের সকল দাবীর প্রতি আন্তরিক।
ইতোমধ্যে নাট্য সংগঠনগুলির জন্য বাৎসরিক এককালীন বরাদ্দ, নাট্য উৎসব সহ সকল প্রকার নাট্য এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। নাট্যকর্মীদের প্রাণের দাবী নাট্যশিল্পী ও নাট্য সংগঠনকে পেশাভিত্তিক নাট্যচর্চায় সহায়তা প্রদানের বিষয়েও অবগত আছেন প্রধানমন্ত্রী।
আমরা বিশ্বাস করি, এই বিষয়ে তিনি অত্যন্ত আন্তরিক এবং আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সরকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বিশ্বমানের ও সময় উপযোগী করে তোলার প্রয়াসে সারাদেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির বিস্তার ঘটিয়েছেন। এটি প্রান্তিক মানুষের কাছে সংস্কৃতিকে পৌঁছে দেয়ার এক মহান প্রয়াস বলে আমরা বিশ্বাস করেন আয়োজকেরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুকীর্তি হল বাংলাদেশের নাটক। সারাদেশের নাট্যচর্চার সাথে যুক্ত মঞ্চনাট্য শিল্পীদের চেতনায় বিরাজ করছে মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা ও শিল্পীদের মানবতা। বাংলাদেশের নাট্যচর্চার সাথে সম্পৃক্ত সবাই প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। মানবিক সংস্কৃতির বিকাশ ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের অভিপ্রায় নিয়ে সারাদেশে নাটকের সংগঠনগুলোকে একই পতাকা তলে নিয়ে আসা এবং ধারাবাহিক নাট্যচর্চার ভেতর দিয়ে মানুষের প্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়জিদ।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দর্শনীর বিনিময়ে বাংলাদেশে নাট্যচর্চার যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয় তারই ধারাবাহিকতায় নাট্যচর্চা আজ সুসংহত এবং বেগবান। নাটকের প্রসার এবং নাট্যভূমিকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোই হল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের মূল উদ্দেশ্য। নাট্যকলা আজ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে নাট্যকলা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কিছু বিকাশমান নাট্য আন্দোলনেরই ফসল।
বাংলাদেশের নাট্যচর্চা বেঁচে থাকবে সংগ্রামী নাট্যকর্মীদের পদচারণায়। প্রতিনিয়ত লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে শাণিত হবে ইস্পাত ফলার মত। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, সুবিধাবাদের মোহ কখনো আচ্ছন্ন করতে পারবে না সেসব মৃত্যুঞ্জয়ী নাট্যকর্মীদের। তাদের পল্লবিত পদযাত্রায় মুখরিত হবে বাংলাদেশের নাট্যচর্চা। তৈরি হবে নতুন নাট্য সড়ক। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলা নাট্যের যে ধারা শুরু হয়েছিল বিষয় বৈচিত্র্যে, তা আজ হয়ে উঠেছে বেগবান ও ঋদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশের নাটক দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করে চলেছে।
কেআই/এসি