ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

রাবি ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইলের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার

মূল পরিকল্পনাকারী রাবি ছাত্র মাহফুজুর রহমান সারদ

মূল পরিকল্পনাকারী রাবি ছাত্র মাহফুজুর রহমান সারদ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও সেই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায়ের জন্য আগের রাতেই নগরের একটি চায়ের দোকানে পরিকল্পনা করা হয়। রিমান্ডে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী রাবি ছাত্র মাহফুজুর রহমান সারদ এ তথ্য দিয়েছে। এর আগে একই তথ্য দিয়ে তার দুই সহযোগি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।

মতিহার থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ জানান, গত রোববার বিকেলে এ মামলার দুই আসামি জীবন ও জয় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করতে গত সোমবার মামলার মূল আসামি মাহফুজুর রহমান সারদকে দুই দিনের রিমান্ড নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে বুধবার দুপুরে তাঁকে আদালতের কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়াও মঙ্গলবার আসামি প্লাবন তালুকদার ও রাফসানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারাও একই তথ্য দিয়েছে। মামলার ছয় আসামির মধ্যে এজাহারনামীয় বিশাল এখনো পলাতক বলে জানান ওসি।

আসামিদের মধ্যে মাহফুজুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর প্লাবন তালুকদার, তারেক মাহমুদ জয় ও রাফসান বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর জীবন ও বিশাল স্থানীয় তরুণ।

মাহফুজুর রহমানের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম মাহবুবুর রহমান। প্লাবন তালুকদারের বাড়ি জয়পুরহাট সদরে। রাফসানের বাড়ি রাজশাহী নগরের বহরমপুরে। জয়, জীবন ও বিশালের বাড়ি রাজশাহীর মতিহারে।

জানা যায়, মাত্র কয়েক মাস আগে ওই ছাত্রীর সঙ্গে মাহফুজের সম্পর্ক হয়। ঘটনার আগে মাহফুজ মেয়েটিকে নিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরাও করত।

ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার ওই ছাত্রী তার কয়েকজন বান্ধবীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মির্জাপুর এলাকার হানুফার মোড়ের একটি মেসে থাকে। ওই মেসের বাইরে মাহফুজ মাঝে মাঝেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা করত। মাঝে মাঝে ধারের নাম করে মেয়েটির কাছ থেকে টাকা-পয়সাও নিত মাহফুজুর। ৫/৬ মাস আগে ওই ছাত্রীর সঙ্গে মাহফুজের সম্পর্ক হয়। মাহফুজ মেয়েটিকে নিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরাও করত।

২৭ জানুয়ারি এ ঘটনায় ওই ছাত্রী মতিহার থানায় মামলা করেন। ওই রাতেই মতিহার থানা-পুলিশ মাহফুজুর, প্লাবন ও রাফসানকে এবং ৭ ফেব্রুয়ারি জীবন ও জয়কে গ্রেফতার করে।

মতিহার থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, জয় ও জীবন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সময় বলেছে, তারা ঘটনার আগের দিন রাজশাহী নগরের তালাইমারীর মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসে পরিকল্পনা করেন। মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন- তারেক মাহমুদ জয়, জীবন, রাফসান ও প্লাবন তালুকদার। পরে তারা এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করে নেয় আসামি বিশালকে।

মাহফুজুর তখন বন্ধুদের জানিয়েছিল ওই ছাত্রীটি তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তিনি চান না। তাই তাঁকে (ছাত্রী) দূরে সরিয়ে দিতে ও তাঁর ধনী পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার পরিকল্পনা সাজায়। মাহফুজুর রহমান দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদেও একই তথ্য দিয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, পাঁচ মাস আগে ওই ছাত্রীর সঙ্গে মাহফুজুর রহমানের বন্ধুত্ব হয়। গত ২৪ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুলের পাশে বসে ওই ছাত্রী ও মাহফুজুর গল্প করছিলেন। এ সময় প্লাবন ফোনে মাহফুজুরকে তাঁদের ভাড়া বাসায় আড্ডা দিতে যেতে বলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে মাহফুজুর ওই ছাত্রীকে নিয়ে প্লাবনের ভাড়া বাসায় যান। কিছুক্ষণ পর প্লাবন তাঁদের দুজনকে গল্প করতে বলে বাইরে চলে যান। তখন মাহফুজুর ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।

এ সময় জীবন ও অজ্ঞাতনামা দুজন এসে ‘তোরা অসামাজিক কাজ করেছিস’ বলে সাদা কাগজে তাঁদের দুজনের সই নেন এবং ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাঁদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় চার হাজার টাকা আদায় করেন। এ অভিযোগে এই ছাত্রী যাতে মামলা করতে না পারে সে জন্য তাঁরা তাঁদের দুজনকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন এবং সেগুলোর ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন।