কুড়িগ্রামে জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:৫০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলায় শিক্ষা বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে দু’জন জাল সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করার পাশাপাশি বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন। এই বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক অভিযোগ করলেও মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় সোনাহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন তার স্ত্রী শাহিদা বেগমকে প্রভাব খাটিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন ২০১১ সালে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শাহিদা বেগম ১৯৯০ সালে বলদিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করেন এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (অনার্স) এবং বিএড সনদ নেন।
শিক্ষক নিবন্ধন জাল সনদ সংগ্রহ করে সহকারী শিক্ষকের পদে স্বামীর সহায়তায় নিয়োগ নেন। নিয়োগ পেলেও সনদ জাল হওয়ায় তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমপিওভুক্তির সুপারিশ করেননি। পরে কৌশলে শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ২০১২ সালে শাহিদা বেগমকে এমপিওভুক্ত করান তার স্বামী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আকতার হোসেন জানান, ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর শাহিদা বেগমের নিবন্ধন যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ বরাবর একটি আবেদন করেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। পরবর্তীতে এনটিআরসিএ-র সহকারী পরিচালক স্বাক্ষরিত ২০ জানুয়ারি পত্রে শাহিদা খাতুন, পিতা-এন্তাজ আলী মন্ডল, রোল-৩০৭১১৫৪৭, রেজিস্ট্রেশন ও সন ৯০০৩৩৮৭৯/২০০৯, পরীক্ষা নং-৫ম, রেজিঃ পরীক্ষা-২০০৯ সহকারী শিক্ষকের সমাজবিজ্ঞানের নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয়। উত্তীর্ণ রোল নম্বরটি অন্য ব্যক্তির (মোছা. সুলতানা খাতুন, পিতা- রবিউল ইসলাম এর)। পত্রে আরো বলা হয়েছে, জাল ও ভুয়া সনদধারী সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের পূর্বক অত্র অফিসকে জানাতে বলা হয়েছে।
তবে এই বিষয়ে নাম প্রকাশ্যে কমিটির একাধিক সদস্য জানান, প্রায় ২ মাস হল মামলা করার চিঠি সভাপতি পেয়েছে। কিন্তু তিনি মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মামল করতে গড়িমসি করছেন। এছাড়াও নিয়ম বর্হিভূতভাবে আলমগীর হোসেন প্রধান শিক্ষকের পদটি হাছিল করেন। পদ পাওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করে বিপুল অর্থের মালিক বনে গেছেন। বিদ্যালয় সংলগ্ন রাজকীয় একটি বাড়ি বানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমার সনদ জাল হলে এমপিওভুক্তি হয় কিভাবে? তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি তার জানা নেই বলে জানান।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঔদত্বপূর্ণ আচরণ করে বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছে তারাই ভালো জানেন। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আমি কিছুই বলতে পারবো না।’
অপরদিকে চিলমারী উপজেলায় থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল সনদ দিয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে চাকরি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আঞ্জুমান আরা নামে আরেক নারীর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উক্ত বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে চাকুরি নেন আঞ্জুমান আরা। চাকুরিতে যোগদানের পর ২০১৬ সালে ১১২৮৩৬৭ ইনডেক্স নম্বরে এমপিওভুক্ত হবার পর থেকে নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন।
তিনি ২০০২ সালের এসএসসি পাস করলেও ২০১২ সালে খুলনা থেকে ডিপ্লোমা ইন লাইব্রেরি এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্সের সনদটি জমা দেন। যার রোল নং-২০১২০১২, রেজি: নং-১২০০০১৬।
অভিযোগকারী আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি সহকারী গ্রন্থাগারিক আঞ্জুমান আরা তার চাকরিতে প্রদানকৃত সনদগুলোর মধ্যে ইন্সটিটিউট অব ইডুকেশন লাইব্রেরি এন্ড ম্যানেজমেন্ট (আইইএলএম) সনদটি জাল। কেননা এই সনদে নাম ঠিক থাকলেও পিতার নাম ও ঠিকানা ভিন্ন।’
তিনি বলেন, ডিপ্লোমার সনদ অনুযায়ী দেখা যায় মোছা. আঞ্জুমান আরার বাড়ি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায়, পিতা-আহাম্মদ আলী। আরা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বোর্ড কমিটিকে ম্যানেজ করে চাকুরির নেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী গ্রন্থাগারিক আঞ্জুমান আরার সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তৈয়ব আলী জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কেননা আমার যোগদানের পূর্বে আঞ্জুমান আরা সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। আমার কাছে কেউ লিখিত কোন অভিযোগ করেননি।’
জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন, ‘জাল সনদ দিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তার চাকরি চলে যাবে এবং মামলাও হবে। চিলমারীর বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে ভূরুঙ্গামারীর বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এআই/আরকে