ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

রাজশাহী আ.লীগে বিতর্কিত ঠেকাতে একাট্টা তৃণমূল

রাজশাহী অফিস

প্রকাশিত : ১০:১৫ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন পহেলা মার্চ। সম্মেলন উপলক্ষে এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। এখন পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। এরই মধ্যে প্রস্তুতি কমিটির করার কাজ শেষ করেছেন দলটি। সম্মেলন কেন্দ্র করে নয়টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করাও হয়।

তবে এবার সম্মেলনে ঠাঁই পাচ্ছেন না বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারিরা। বিশেষ করে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ভূমিদখল করে কয়েক বছরে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তারা এবার ঠাঁই পাচ্ছেন না এবারের কমিটিতে। এছাড়াও যারা অনুপ্রবেশকারি এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিতর্ক রয়েছে তারা যেন কোনভাই নতুন কমিটিতে ঠায় না পাই সে নিয়ে সরব রয়েছে তৃণমূলের নেতারা। ইতোমধ্যেই শীর্ষ এক নেতার বিস্তর বিতর্কিত কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেখানে তার পিতার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত কর্মকান্ডও তুলে ধরা হয়েছে।  

তাই এবার মহানগরে পদ পেতে চলছে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ। নিজ নিজ শক্তি ও বলয়ে চলছে লবিং-গ্রুপিং। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদটি নিয়েও বর্তমানে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। দলের ভেতরে ও বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এই সাংগঠনিক পদটি নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই পদ প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন অন্তত হাফ ডজন নেতা। 

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার আবারও এই পদে আসতে চাইছেন। তিনি নগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। ফলে এবারও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই আলোচনায় আছেন তিনি। তবে সিটি ও সংসদ ভোটে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য তার বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ডে অভিযোগ উঠে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। যার কপি গণমাধ্যম অফিসগুলোতেও দেয়া হয়েছে।

এর বাইরে নগর কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব ও দলীয় নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু। লবিং-গ্রুপিংমুক্ত সহজ-সরল মানুষ হিসেবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রানা তৃণমূলেও জনপ্রিয়। আর পারিবারিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের সুবাদে বেন্টুরও নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে শক্তিশালী অবস্থান ও সমর্থন রয়েছে। আসন্ন নগর কমিটিতে রানা বা বেন্টুকে তার রানিংমেট হিসেবে পেতে আগ্রহী সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এমন আলোচনা আছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। 

এর বাইরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নগর কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান, প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবুর নামও রয়েছে নেতাকর্মীদের আলোচনায়। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘‘সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করে এবার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও দখলবাজ মুক্ত কমিটি করতে হবে। কোনো অনুপ্রবেশকারী বা বিতর্কিত নেতাকে পদ দেওয়া যাবে না।’’

রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মহানগর কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাবু বলেন, ‘‘৯৬-এর পর থেকে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি সুসংগঠিত হয়েছে। তবে দলের মধ্যে অনেক অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে অনেক হাইব্রিড নেতাও তৈরি হয়েছে। যারা হটাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এমন হাইব্রিড নেতা মহানগরের আগামী কমিটিতে প্রত্যাশা করি না। আর দিলে মানবোও না।’’

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে; দুর্নীতি, চাঁদাবাজি অথবা ভূমি দখলের এমন কাউকে আমাদের নেতাকর্মীরা নেতৃত্বে চাইনা; আমিও চাইনা। অতএব, তাদের এবারের কমিটিতে জায়গা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।’’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু বলেন, ‘‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ একই সংগঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটি পদে যদি বিতর্কিত মুক্ত সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা যায় তবে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের আস্তা আরও বাড়বে।’’

সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘‘আগামী পয়লা মার্চ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর শুভ উদ্বোধনও একই মাসে হবে। দুইটি বিষয়কে মাথায় রেখেই এই মহানগরীকে সাজিয়ে তোলা হবে। দেখার মতো একটি সম্মেলন হবে। শান্তির শহর রাজশাহীতে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন এবং পরবর্তীতে মুজিববর্ষ উদ্যাপন হবে বলে আশা করছি।’’

সর্বশেষ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর। ওই কাউন্সিলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচটি সাংগঠনিক থানা ও ৩৭টি ওয়ার্ড কমিটি আছে। ২০১৪ সালের কাউন্সিলর দিয়েই এবারের মহানগরের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেই হিসাবে এবার কাউন্সিল হবে ৩৯৫ জন।

আরকে//