ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৮ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১১:৫০ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি বলেন, সমগ্র পাকিস্তানের সার্বিক কল্যাণ সাধন, বিশেষ করে সমগ্র দেশে একটি শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মুখ্য উদ্দেশ্য।

বঙ্গবন্ধু বলেন, এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ছয়-দফার প্রণয়ন করিয়াছে এবং সমাজততন্ত্রবাদী কর্মসূচি গ্রহণ করিয়াছে।

ইহাদের ভূল ভাঙ্গিবে
নব নির্বাচিত সভাপতি আওয়ামী লীগ কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের স্মরণ রাখিতে হইবে যে, ছয়-দফার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আজ যে সংগ্রামের পথে পা বাড়াইয়াছে, সে পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং এই পথে সাফল্য অর্জন সময় সাপেক্ষ। তবে, ছয়-দফার বিরুদ্ধে আজ যেসব মহল দায়িত্বহীন প্রচারণায় লিপ্ত আছেন, একদিন-না একদিন তারা তাদের ভুল বুঝিতে পারিবেন।

পশ্চিম পাকিস্তানের যেসব নেতা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, অথচ ছয়-দফার বিরুদ্ধে প্রচারণা করিতেছেন, তাদের পশ্চিম পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জবিনের দুঃখ-দুর্দশার আলোকে ছয় দফা বিচার করিয়া দেখা প্রয়োজন। কারণ, আওয়ামী লীগের ছয়-দফায় শুধু পুর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনই দাবি করা হয় নাই, এতে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্যও একই স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হইয়াছে। তাই, পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণ একদিন-না একদিন ছয়-দফা দাবিকে তাদেরও নিজেদের দাবি বলিয়াই মানিয়া লইবেন।

কোন সংক্ষিপ্ত পথ নাই
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন যে, ছয়-দফার প্রশ্নে কোন আপস নাই। রাজনীতিতেও কোন সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ নেতার দল নয়- এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রতিষ্ঠান। 

এ প্রতিষ্ঠানের জনক মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কর্মীদের প্রাণাধিক প্রিয় মনে করিতেন। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মী আমার কাছে সহোদর ভাই-এর মতো। শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ প্রতিষ্ঠানের নেতা, তাঁর নীতিই আমাদের আদর্শ।

আওয়ামী লীগ কর্মীদের চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য আহ্বান জানাইয়া বঙ্গবন্ধু বলেন যে, এদেশে আওয়ামী লীগ সব সংগ্রামেরই বাণী প্রথম বহন করিয়াছে। সংগ্রামের পথে তাহারা নির্যাতন ভোগ করিয়াছে সত্য, কিন্তু সংগ্রাম তাহাদের ব্যর্থ হয় নাই। ছয়-দফার সংগ্রামও ব্যর্থ হইবে না। ত্যাগ ও তিতিক্ষার দ্বারা সংগ্রামকেও আমরা সার্থক করিয়া তুলিব। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদেরই।

দেশকেই হেয় করা হইতেছে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কনভেনশন দলের নেতৃবৃন্দের ছয়-দফা বিরোধী প্রচারণার জবাবদান প্রসঙ্গে বলেন যে, সরকারি নেতারা ছয়-দফার বিরুদ্ধাচরণ করিতে গিয়া যে-সব বেসামাল উক্তি করিতেছেন তাহাতে দেশ ও দেশবাসীকেই বিশ্বের দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করিতেছেন। তাহাদের মনে রাখা উচিত যে, পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা গণতন্ত্রের বিশ্বাসী। স্বৈরতন্ত্রের ও কায়েমী স্বার্থবাদের বিরুদ্ধে তাহারা সংগ্রাম করিতে বদ্ধপরিকর।

সংগ্রামী কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ না করিয়া তাহাদের দাবি-দাওয়াকে যদি সরকার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে বিচার করিতে না শিখেন তবে সংগ্রাম তীব্রতর হইবে, সংগ্রামকে বানচাল করা যাইবে না। ন্যায্য দাবির সংগ্রামের বিরুদ্ধে আজকের সরকারের মতো অতীতের বহু সরকারও হীনতম প্রচারণা চালাইয়াছে; কিন্তু তাহাতে কোন ফলোদয় হয় নাই। ন্যায্য দাবি চিরকালই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এবারও আমাদের দাবি যদি ন্যায্য হয়; কুটিল প্রচারণায় এ দাবি দাবাইয়া দেওয়া যাইবে না। সংগ্রাম এবং তীব্রতর সংগ্রামের দ্বারাই আমরা দাবি আদায় করিয়া লইব।

তথ্যসূত্র : এই দেশ এই মাটি গ্রন্থ।


এএইচ/