করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষা কি ত্রুটিপূর্ণ?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪০ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার
করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার পর মানুষকে ভুলভাবে জানানো হচ্ছে যে তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন- এমন সন্দেহের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, লোকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়ার আগে অন্তত ছয়টি পরীক্ষার ফলাফলে আসে যে, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন।
এদিকে, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল চীনের হুবেই প্রদেশে, চূড়ান্তভাবে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়ার আগেই শুধু উপসর্গ থাকলেই তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে ধরা হচ্ছে।
যার কারণে এক দিনে ১৫ হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়- যা এই প্রাদুর্ভাবে মোট আক্রান্তের সংখ্যার এক তৃতীয়াংশের সমান।
রোগীর কাছ থেকে একটি নমুনা নেয়া হয়। পরে পরীক্ষাগারে ভাইরাসের (যদি থাকে) জেনেটিক কোড বের করে তা বার বার কপি করা হয় যাতে তা সনাক্ত করা যায়।
‘আরটি-পিসিআরা’ নামে এই পরীক্ষা এইচআইভি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এবং এটা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
‘এগুলো খুবই শ্রমসাধ্য এবং জোরালো পরীক্ষা যাতে ভুলভাবে নেতিবাচক ফল (লো ফলস-নেগেটিভ) বা ভুলভাবে ইতিবাচক ফল (লো ফলস-পজিটিভ) আসার হার খুবই কম,’ বলেন কিংস কলেজ লন্ডনের ডা. নাথালি ম্যাকডারমট।
রেডিওলোজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ১৬৭ জন রোগীর মধ্যে ৫ জনের পরীক্ষায় আসে যে তাদের সংক্রমণ নেই। তবে ফুসফুসের স্ক্যান পরীক্ষায় পাওয়া যায় যে তারা আক্রান্ত। কিন্তু পরে করা পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায় যে, তারা আক্রান্ত। এ ধরণের আরো অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছেন ডা. লি ওয়েনলিয়াং-ও। যিনি এই রোগ সম্পর্কে প্রথম উদ্বেগ জানিয়েছিলেন এবং এতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর চীনে নায়কোচিত মর্যাদা পেয়েছেন। তিনি বলেছিলেন যে, বিভিন্ন সময় পরীক্ষার ফলে আসে যে তিনি সংক্রমিত নন। কিন্তু শেষমেশ তিনি এতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন।
একই ধরণের ঘটনা সংক্রমণের শিকার অন্য দেশগুলো যেমন সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডেও পাওয়া যায়। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের ডা. ন্যান্সি মেসোনিয়ার বলেন, করোনাভাইরাসের অনেক পরীক্ষায় ‘অমীমাংসিত’ ফল আসছে।
এ সম্পর্কিত সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, পরীক্ষাগুলো যথার্থ কিন্তু পরীক্ষার সময় হয়তো রোগীদের মধ্যে করোনা ভাইরাস থাকে না। চীনে এখন কাশি, ঠাণ্ডা এবং ফ্লু এর মৌসুম। আর রোগীরা হয়ত এসব অসুখকেও করোনা ভাইরাস বলে ভুল করছে। ‘করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গগুলো শ্বাসযন্ত্রকে সংক্রমিত করে অন্য ভাইরাসগুলোর মতোই,’ বলেন ডা. ম্যাকডারমট।
‘প্রথমবার পরীক্ষার সময় হয়তো তারা সংক্রমণের শিকার হয়নি।’
‘পরে হয়ত সময়ের সাথে সাথে তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং পরে পরীক্ষা করলে তা ধরা পড়ে। এটা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।’
আরেকটি কারণ হতে পারে যে, রোগীর হয়তো করোনা ভাইরাস আছে, কিন্তু এটা এতটাই প্রাথমিক পর্যায়ে এবং সংখ্যায় এত কম থাকে যে সনাক্ত করার জন্য নমুনায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাওয়া যায় না। যদিও আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় জেনেটিক বস্তুগুলো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়, তবুও ন্যূনতম মাত্রায় থাকা জরুরি।
‘তবে ছয় বার পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে এই যুক্তি টেকে না,’ ডা. ম্যাকডারমট বলেন। ‘ইবোলার ক্ষেত্রে, নেতিবাচক ফল আসার পরও আমরা ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি ভাইরাসকে পর্যাপ্ত সময় দিতে।’
অন্যদিকে, পরীক্ষা কিভাবে করা হচ্ছে তাতেও সমস্যা থাকতে পারে। নমুনা যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা করা না হয় তাহলে পরীক্ষা কোন কাজে আসবে না। এছাড়া যেসব চিকিৎসকরা পরীক্ষা করছেন তারা ভুল জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন কি না তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে। এটা গলা এবং নাকের সংক্রমণের মতো নয় বরং এটা ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণ। যাইহোক, যদি রোগীর কাশি থাকে, তাহলে ভাইরাস সনাক্ত করা সম্ভব।
চূড়ান্ত বিকল্পটি হচ্ছে, নতুন করোনা ভাইরাস সনাক্তের জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষাটি ত্রুটিযুক্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ভিত্তিক।
পরীক্ষাটি করার জন্য গবেষকদের অবশ্যই প্রথমে ভাইরাসটির জেনেটিক কোডের অংশ পেতে হবে। এটিকে বলা হয় প্রাইমার। এটি একই ধরণের কোডের সাথে মিশে যায় এবং তাকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা সাধারণত ভাইরাসটির কোডের ওই অংশটিই আহরণের চেষ্টা করেন যেটি তারা মনে করেন যে বিভাজিত বা পরিবর্তিত হবে না।
কিন্তু যদি প্রাইমারের সাথে রোগীর শরীরে থাকা ভাইরাসের মধ্যে মিল খুব কম থাকে তাহলে পরীক্ষার ফলাফলে আসবে যে সে ভাইরাসে আক্রান্ত নন।
তাই এই মুহূর্তে বলা যাবে না যে, আসলে কি ঘটছে। ‘এটা খুব একটা পরিবর্তিত হবে না,’ ডা. ম্যাকডারমট বলেন।
‘তবে এটা নিশ্চিত যে, রোগীর মধ্যে যদি উপসর্গ থাকে তাহলে তাকে বার বার পরীক্ষা করাতে হবে।’
সূত্র: বিবিসি
একে//