রাজশাহী মহানগর আ’লীগের পদ পেতে নেতাদের ছোটাছুটি
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:৫৩ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার
দীর্ঘ ৫ বছর পর রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামি ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পদ প্রত্যাশীরা নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ যেমন বাড়িয়েছেন, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন সক্রিয়। পোস্টার-ব্যানারে রঙিন হয়ে উঠেছে নগর সড়কের মোড়গুলো। প্রচার চালানো হচ্ছে ফেসবুকেও।
কাউন্সিল ঘিরে রাজশাহীর রাজনীতিতে নানা মেরুকরণও শুরু হয়েছে। কার সঙ্গে কে থাকবেন, কে প্রার্থী হলে কারা সমর্থন দেবেন চলছে সেই হিসাব-নিকাশ। তবে শীর্ষ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়েই সমীকরণটা কিছুটা জটিল। সভাপতি পদ প্রত্যাশী দুইজন হলেও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ছোটাছুটি করছেন ডজন খানেক নেতা।
সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প দেখছেন না নেতাকর্মীরা। তবে এই পদ পেতে আগ্রহী মহানগর কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান বজলুর রহমান। সভাপতি হওয়ার জন্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রে জোর তদবির চালাচ্ছেন তিনি।
আর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার পদটি ধরে রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তার সমর্থকরা ফেসবুকে ‘ডাবলু সরকার সমর্থকগোষ্ঠী’ নামে পেজ খুলে প্রচার শুরু করেছেন। এ ছাড়াও ক্লিন ইমাজের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে যুগ্ম সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু ব্যাপক তৎপর রয়েছেন। তাদের পক্ষেও চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা।
এদের বাইরে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে সরব রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নওশের আলী, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ শরিফুল ইসলাম বাবু, ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জোবায়ের আহমেদ রুবন। তারা লিটন ও কেন্দ্রের সমর্থন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
কেমন নেতৃত্ব চান- জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘রাজশাহীর তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান টেন্ডারবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক যাতে কেউ মহানগরের নেতৃত্বে আসতে না পারেন। হাইব্রিড কেউ যেন পদ বাগিয়ে নিতে না পারে, এ ব্যাপারেও কেন্দ্রের সজাগ থাকা জরুরি।’
সম্মেলন সফল করতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ সংগঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি পদে যদি বিতর্কিত মুক্ত সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তবে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের আস্থা আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে বজায় রেখে রাজনীতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং তাদের নূন্যতম চাওয়া পাওয়া ও দুঃখ্য-কষ্ট সমাধান করার চেষ্টা করি আমার জায়গা থেকে। এছাড়াও যেহেতু তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছি, তাই তৃণমূলের সমস্যা ও দুঃখ-কষ্ট বুঝি। সেই বিবেচনায় যদি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হতে পারি তবে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করতে পারব।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাঈমুল হুদা রানা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও দল ছেড়ে চলে যায়নি বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে এবং দলের জন্য এখনো সরব রয়েছে-এমন নেতাদের নেতৃত্বে দেখতে চায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘১ মার্চ যে সম্মেলন হবে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির সূচনা হবে এ মাসে। সম্মেলনকে সামনে রেখে নগরীকে সাজানো হবে। আশা করি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন হবে, নেতাকর্মীরা পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করবেন।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয় ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর। ওই কাউন্সিলে খায়রুজ্জামান লিটন সভাপতি ও ডাবলু সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচটি সাংগঠনিক থানা ও ৩৭টি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো নতুনভাবে না হওয়ায় ২০১৪ সালের করা ৩৯৫ জন কাউন্সিলর দিয়েই এবারে মহানগর কমিটির সম্মেলন হবে।
এআই/