উদ্বেগে-খাদ্যাভাস
আফসানা নীলা
প্রকাশিত : ০৩:৫৩ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:০৬ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার
প্রতিদিনের ব্যস্ততা, রোগ-শোক, সংসার-সন্তান, অফিস, শরীর.... স্ট্রেস থেকে যেন দূরে থাকা হচ্ছেই না আমাদের। পিছু ছাড়ে না অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা। এই দুশ্চিন্তা থেকেই তৈরি হয় হতাশা। দেখা দেয় জীবনের ছন্দপতন।
অপর্যাপ্ত ঘুম, মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া, ঘুম আসতে দেরি হওয়া, চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়া এসব ঘটতে থাকে হরহামেশায়। টিনএজাররা দুশ্চিন্তার স্বীকার হয়ে কখনো খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে অপুষ্টিতে ভোগে, আবার কখনো হতাশায় বেশি খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলে। অবসাদ থেকে বাড়ে আসক্তিও। অ্যালকোহল, সিগারেট বা কোনও অ্যান্টি ডিপ্রেশনাল ওষুধে ঝুঁকে পড়ে অনেকে। যা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দেয় অসুস্থতার মাত্রা।
তাহলে কি আর করা! ভাবনা চিন্তা তো মনের বিষয়, কে নিজের মনকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে সেটা তো যার যার বিষয়, তবে উপায়? খুব অল্পতেই বিরক্তি, রাগ, অভিমান, অনুশোচনা মূলত এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের কিছু হরমোন। তাই এই শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া ওষুধ নির্ভর না করে চাইলে আমরা মন আর খাবারের মাধ্যমে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি।
বেশিরভাগ দুশ্চিন্তাই সংকট বা সমস্যা মিটে গেলে বা সময়ের সাথে সাথে দূর হয়ে যায়। তবে কিছু দুশ্চিন্তার পরিণতি কখনো মারাত্বক হয়ে পড়ে। মারাত্বক সেসব ঝুঁকির দিকে যেতে চাই না আমরা, তাই এবার জানবো-স্ট্রেস কমাতে সহায়ক কিছু খাবারের কথা।
* অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিনের ডায়েট রাখুন ড্রাই ফ্রুটস্, পাতাওয়ালা সবুজ শাক-সবজি, কলা, কমলা, আপেল, মাছ, সয়াবিন, হোল গ্রেইনস, দই, ডাল ইত্যাদি।
* প্রতিদিন অন্তত ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খান। ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল থেকে এই ভিটামিন পেতে পারেন। দুশ্চিন্তার কারণে শরীরে ছড়িয়ে পড়া ক্ষতিকর ‘ফ্রি র্যাডিক্যাল’ গুলোর সঙ্গে লড়াই করে এই ভিটামিন।
* পানি ও ফলের জুস খেতে হবে প্রচুর, যা পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে। দৈনিক খেতে পারেন গাজর-টমেটোর রস বা বিভিন্ন সবজি সেদ্ধ।
* গ্রীন টি কিম্বা ভেষজ চা পান করুন। উত্তেজিত নার্ভ রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে ভেষজ চা। তবে এটি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে খাদ্যগ্রহণের দু ঘণ্টা আগে বা পরে। কারণ ভেষজ চায়ের এন্টি অক্সিডেন্ট আয়রণ শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।
* অ্যাংজাইটিতে পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ বেশ জরুরি। রিফাইন্ড খাবার, মিষ্টি ও ভাজা খাবার এবং জাঙ্ক ফুড পরিপাক প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে বলে এসব খাদ্যগ্রহণ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। পাশাপাশি ক্যাফেইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল উপকারের তুলনায় ক্ষতিই করে বেশি। এসব খাবার বা পানীয় প্রথম দিকে উপকারী মনে হলেও পরবর্তীতে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রেসের মাত্রা। উচ্চমাত্রার কার্বহাইড্রেট গ্রহণ, ধূমপান, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এসিডিটি বাড়িয়ে অসুস্থতার মাত্রা বাড়ায়।
* বাদামি চালে মিলবে প্রচুর ভিটামিন বি। এই ভিটামিন থাকলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা কম। মানসিক জটিলতা থেকে মুক্তি দিতেও সহায়ক ভিটামিন বি।
* পালংশাক জাতীয় সবজিগুলো ভিটামিন এ, সি এবং বি-তে ভরপুর, যা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম দেহে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমায়। মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক স্থিরতা আনতে সাহায্য করে।
* ঘুম না হওয়া থেকে অ্যাংজাইটির মাত্রা বাড়তে পারে। তাই প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। রাতে ঘুম না আসলে হালকা গরম দুধ পান করলে উপকার পাওয়া যায়। একগ্লাস দুধে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ক্যালাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যার সবগুলোই ক্ষতিকর ‘ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
অ্যাংজাইটি থেকে অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ, পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, ক্লান্তিভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা উচিত। অতিরিক্ত চিন্তা কমাতে যোগব্যায়াম কিম্বা মেডিটেশন অথবা হালকা যেকোন শরীরচর্চা ভীষণ উপকারী। এতে শরীরে ক্লান্তিও আসে ঘুমও ভালো হয়।
জীবনে চাপ, মনের বিরুদ্ধে যাওয়া এমন সব নেতিবাচক পরিস্থিতি ঠেকাতে মাথা ঠান্ডা রাখা আর শারীরিক সুস্থতার কোনো বিকল্প নেই। মুখে আমরা যতই বলি “ডোন্ট ওরি বি হ্যাপি”, কিন্তু বাস্তবিক হ্যাপি থাকাটা কিছুটা মুশকিল। এক্ষেত্রে একটি কথা আমাদের সব সময়ই মাথায় রাখা উচিত, সব কিছুর আগে নিজের সুস্থতা, নিজের ভালো থাকা।
আফসানা নীলা
সাংবাদিক, একুশে টেলিভিশন
মাস্টার্স ইন ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন