ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বেনাপোল বন্দরে শ্রমিক-আনসার সংঘর্ষ, আল্টিমেটাম

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:০৬ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

বেনাপোল বন্দরে শ্রমিক-আনসার সংঘর্ষ

বেনাপোল বন্দরে শ্রমিক-আনসার সংঘর্ষ

বিড়ি খাওয়ার মত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আনসার সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুত্বর আহত এক শ্রমিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে বেনাপোল স্থল বন্দরের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে। 

এই ঘটনার জের ধরে বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানিকৃত মালামাল লোড-আনলোড দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। শ্রমিকদের আরেকটি অংশ যশোর-বেনাপোল সড়ক অবরোধ করে রাখে, পরে পুলিশ এসে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে আনসার ক্যাম্পের আশপাশে। 

এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে হ্যান্ডলিং শ্রমিক অফিস ও বন্দরের ৫নং গেটের সামনের সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে শ্রমিকরা। সমাবেশে আনসার সদস্যদের বদলী, শাস্তি এবং বন্দরের কাছে বকেয়া পাওনা টাকা দ্রুত সমাধান না করলে বন্দরে পণ্য লোড আনলোড বন্ধের হুমকি দেয় বন্দর শ্রমিকরা। 

অন্যদিকে, সংঘর্ষে বাদল নামে একজন শ্রমিককে আহত অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে লেবার শ্রমিকেরা আনসার সদস্যের প্রধান (পিসি) এসএম সাকিবুজ্জামান শাকিবকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাকে প্রত্যাহারের আশ্বাসের ভিত্তিতে লেবার শ্রমিকরা কাজে ফিরে যান।

বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (৮৯১) সভাপতি কলিম উদ্দিন মোল্যা বলেন, বিনা কারণে বাদল নামে এক শ্রমিকের গায়ে আনসার সদস্যরা হাত তুলেছে। তাকে এমনভাবে মারধর করা হয়েছে, সে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। যদি এর সঠিক বিচার না হয় এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ১৬ মাসের প্রায় ৩ কোটি টাকা মজুরি বিল পরিশোধ না করে, তাহলে বন্দরের লোড আনলোডসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

বেনাপোল বন্দরে কর্মরত আনসারদের প্লাটুন কমান্ডার সাকিবুজ্জামান সাকিব বলেন, বেনাপোল বন্দরে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্য শেডে রাখা হয়। এখানে এর আগেও কয়েকবার আগুনে পুড়ে এসব পণ্য পুড়ে ছাই হয়েছে। মারাত্মকভাবে আমদানিকারক ও দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। 

ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকরা ৪০নং শেডে ধুমপান করছিল। তাদের ধুমপান করতে নিষেধ করা হয়। এসময় একজন শ্রমিক অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ করে আনসার সদস্যদের। এরপর উভয় পক্ষ উত্তেজিত হয়ে হাতাহাতি হয়। শ্রমিকদের একজন নেতা ক্যাম্পে এসে মিমাংসার আশ্বাস দেয়ার কিছু সময় পর তারা দল-বল নিয়ে আনসার ক্যাম্পে এসে ইট নিক্ষেপ করে। আমরা বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (৮৯১) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুপুরে লাঞ্চ করার সময় হঠাৎ আনসার সদস্যরা এসে বাদল নামে এক শ্রমিক সদস্যকে অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ করতে থাকে। এর প্রতিবাদ করলে আনসারের পিসি আমাদের শ্রমিক বাদলের মাথায় রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্রমিকের উপর হামলার আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। পোর্ট থানার ওসির আশ্বাসে তারা সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আবারও আন্দোলন করতে বাধ্য হবো। 

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আনসার এবং লেবারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। বিষয়টি জানার সাথে সাথে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এবং সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে এরকম আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ তুলে নেয়। এখন পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল জানান, উভয় পক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টির নিম্পত্তির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 

এনএস/