মাতৃভাষার জন্য ভালোবাসা
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রকাশিত : ১২:০০ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১.
এই লেখাটি যেদিন প্রকাশিত হবে সেদিনের তারিখটি হবে ২১ ফেব্রুয়ারি। বাইরের দেশের যেসব মানুষ কখনো আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি দেখেনি তারা যখন প্রথমবার এদেশে এসে এই দিনটি দেখে, তারা নিঃসন্দেহে অনেক অবাক হয়ে যায়। আমরা আবেগপ্রবণ জাতি হিসেবে ‘বিখ্যাত’ এবং ২১শে ফেব্রুয়ারিতে আমরা যথেষ্ট তীব্রতা দিয়ে সেই আবেগ প্রকাশ করি। মনে আছে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে কার্জন হলের মালীকে খুবই মলিন মুখে ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করতে দেখতাম। তার কারণ, সে বেচারা জানতো এতো যত্ন করে গড়ে তোলা তার বাগানের অসংখ্য ফুল এক রাতের ভিতর উধাও হয়ে শহীদ মিনারের বেদীতে স্থান নেবে।
২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে আমরা তখন খালি পায়ে প্রভাত ফেরিতে বের হতাম। শুধু যে শহীদ মিনারের বেদীতে আমরা জুতো পায়ে উঠতাম না তা নয়, পুরো প্রভাত ফেরিতে আমাদের পায়ে জুতো থাকতো না । শুধু তাই নয়, পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আলকাতরা নিয়ে ছাত্ররা বের হতো ইংরেজি কিংবা উর্দুতে লেখা সাইনবোর্ডের লেখা ঢেকে দেওয়ার জন্য। ফেব্রুয়ারি মাসে সকল সংগঠন তাদের নিজের মত করে শহীদ সংকলন বের করত, সবাই তখন কবি, সবাই শিল্পী! আমি আমার জীবনে যতগুলো ২১ ফেব্রুয়ারি দেখেছি তার মাঝে সবচেয়ে তীব্রটি ছিল ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিটি। তখনো বঙ্গবন্ধুর ডাক দেওয়া অসহযোগ আন্দোলনটি শুরু হয়নি, ৭ মার্চের ভাষণ দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাটিও দেয়া হয়নি কিন্তু আকাশে বাতাসে তখন কীভাবে যেন আসন্ন স্বাধীনতার ঘোষণার বার্তাটি রটে গিয়েছিল। সেই দিনটিতে শহীদ মিনারে যেভাবে মানুষের ঢল নেমেছিল তার তুলনা পাওয়া কঠিন।
সেই মানুষের ঢল দেখেই সম্ভবত পাকিস্তান মিলিটারি ২৫ মার্চের গণহত্যার পরিকল্পনা পাকা করে ফেলেছিল। সে কারণেই সম্ভবত গণহত্যার অংশ হিসেবে তারা সবার আগে শহীদ মিনারটি গুড়ো করে ফেলেছিল। ইটপাথরের শহীদ মিনারটি গুড়ো করে ফেললেই যে এই দেশের মানুষের বুকের ভেতর বাঁচিয়ে রাখা আসল শহীদ মিনারটি ধ্বংস করা যায় না, মাথামোটা পাকিস্তান মিলিটারিরা সেটা তখনও জানতো না।
২.
কেউ যদি ২১ ফেব্রুয়ারির তারিখটি বাংলা ক্যালেন্ডারে দেখে, তাহলে দেখবে সেটা হচ্ছে ৮ ফাল্গুন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিটিও ছিল ৮ ফাল্গুন। যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদ দিবস, একসময়ে অনেকে মনে করতেন দিবসটিকে ইংরেজি ২১ ফেব্রুয়ারি হিসেবে পালন না করে বাংলা ৮ ফাল্গুন হিসেবে পালন করা উচিত। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি সারা পৃথিবীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়ে যাবার পর আজকাল আর কাউকে সেই দাবিটি করতে দেখি না।
কেউ যেন মনে না করেন যে আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারির বাংলা মাসের তারিখটি ঘটনাক্রমে এই বছর ৮ ফাল্গুন হয়ে গেছে। আসলে বাংলাদেশে বাংলা ক্যালেন্ডারে মাসগুলোকে এমনভাবে নেয়া হয়েছে যেন আমাদের ঐতিহাসিক দিনগুলো প্রতিবছরই আসল বাংলা তারিখের সঙ্গে মিলে যায়। আমরা যারা শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তারা বিশেষ দিন না হলে ক্যালেন্ডারে বাংলা তারিখ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাই না। তবে আমার নিজের জন্য বাংলা মাসের একটা অন্য ধরনের গুরুত্ব আছে। আমি ইংরেজি মাসের নাম শুনে মাসটি কেমন আন্দাজ করতে পারি না। জুন মাস শুধুই জুন মাস, জুলাই শুধুই জুলাই। কিন্তু যদি কোনো মাসের নাম বাংলায় বলা হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেই মাসটি আমি অনুভব করতে পারি। বৈশাখ মানে শুধু কাঠফাটা রোদ নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের কোনায় কালো মেঘ, কাল বৈশাখী। আষাঢ় কিংবা শ্রাবণ মাসে ঝরঝর করে বৃষ্টি হচ্ছে, অগ্রহায়ণ মাসে শীত আসি আসি করছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে, বাতাসে ধান মাড়াইয়ের গন্ধ! এরকম প্রত্যেকটা বাংলা মাসের নাম শুনে আমি সেটা অনুভব করতে পারি, কিন্তু ইংরেজি মাস থেকে আমি সেগুলো পাই না।
এখানেই শেষ নয়। অনেকেই জানে না, বুঝে হোক না বুঝে হোক সারা পৃথিবীর মানুষ প্রেম ভালোবাসার জন্য কিন্তু বাংলা মাসকে ব্যবহার করে! ১৪ই ফেব্রুয়ারি হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন দিবস, কেউ কী কখনো চিন্তা করে দেখেছে, কেন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন কিংবা ভালোবাসা দিবস? তার কারণ এটি হচ্ছে আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারের বসন্ত ঋতুর প্রথম দিন! সারা পৃথিবীতে শীতের শেষে বসন্ত কালকে ভালোবাসার কাল বলে ধরে নেয়া হয়, সেই হিসেবে বসন্তের প্রথম দিনটি ভালোবাসার দিন হিসেবে ধরে নেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, কিন্তু সেই বসন্ত ঋতুটি কিন্তু অন্য দেশের নয়, আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারের বসন্ত ঋতু!
শুধু যে প্রেম ভালোবাসার জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয় তা নয়, জ্যোতির্বিজ্ঞান করার জন্যও কিন্তু বাংলা ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান নির্দিষ্ট করার জন্য পুরো আকাশটিকে বারোটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক বিভাজনটির নামগুলো আমরা জ্যোতিষি-চর্চা নামে একটি পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের কারণে জেনে গেছি, যেটাকে আমরা রাশিচক্র বলে থাকি। মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট ইত্যাদি নামে যে রাশিচক্র আছে সেগুলো আসলে আকাশের বিভাজন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আকাশে পরিবর্তিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোন রাশিটি কখন আকাশে উঠবে সেটি কিন্তু আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডার দিয়ে নির্ধারিত। কিংবা উল্টোটা- বাংলা ক্যালেন্ডারটিই হয়তো একসময় এই জ্যোতির্বিজ্ঞানিক বিভাজন দিয়ে ঠিক করে নেয়া হয়েছিল!
যাই হোক, আমি এই বিষয়ের গবেষক নই, সেজন্য বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে আমার এই উচ্ছ্বাস যদি একটু বেশি হয়ে থাকে তাতেও আমার কোনো সংকোচ নেই। তবে মোটামূটি জোর দিয়ে আমি একটা বিষয় সবাইকে মনে করিয়ে দিতে পারব। আমাদের দেশে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন মানেই খানিকটা উদ্দাম ঝাপাঝাপি। আজকাল এমন অবস্থা হয়েছে যে, পুলিশ র্যাব রীতিমত ঘোষণা দিয়ে রাস্তাঘাটে ইংরেজি নববর্ষ পালন বন্ধ করার চেষ্টা করছে। সেই তুলনায় বাংলা নববর্ষ অনেক মধুর। আমরা খুব ভোর বেলায় খুবই কোমল পরিবেশে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে দিনটি পালন করি! কোনো একজন তরুণ কিংবা তরুণী যদি বলে সে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে, তাহলে কেউ ভুরু কুঁচকে তার দিকে তাকায় না।
৩.
আমি আসলে বাংলা নববর্ষের একটি বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলতে চাইছিলাম, বিষয়টি আমি নিজে অনেকদিন থেকে লক্ষ্য করে এসেছি। কিছুদিন আগে যখন একটা অনুষ্ঠানে শান্তিনিকেতন গিয়েছিলাম, সেখানে আগরতলার একজন বুদ্ধিজীবীও আমাকে ঠিক এই বিষয়টির কথা বলেছিলেন। সেই বিষয়টি হচ্ছে, বাংলা নববর্ষের তারিখ। সবাই নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক বাংলা নববর্ষের তারিখের সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাংলা নববর্ষ, কিংবা পাহাড়ীদের বর্ষবরণের তারিখটি কিন্তু মেলে না। শুধু তাই না, পশ্চিমবঙ্গ কিংবা আগরতলার বাঙ্গালীদের নববর্ষও আমাদের সঙ্গে মেলে না। শান্তিনিকেতনে আগরতলা থেকে আসা সেই বুদ্ধিজীবী ভদ্রলোক আমাকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, আমি যেন বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে বলি তারা যেন পৃথিবীর সব বাঙ্গালীদের নিয়ে বাংলা নববর্ষটি উদযাপন করেন। (স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বেতন কিংবা পেনশন আটকে গেলে তারা অনেক সময় আমাকে এসে অনুরোধ করেন, আমি যেন পত্রপত্রিকায় একটু লিখি। আমি এখন পর্যন্ত কাউকেই বোঝাতে পারিনি পত্রপত্রিকার লেখালেখি কেউ পড়ে না, পড়লেও সেটাকে কোনো গুরুত্ব দেয় না। যেভাবে চলছে সেভাবে চললে কিছুদিন পর দেখা যাবে পত্রপত্রিকা কিংবা টেলিভিশন, এই বিষয়গুলোই দেশ থেকে উঠে গেছে!) তবে বাংলা নববর্ষ নিয়ে পৃথিবীর বাঙ্গালিদের মাঝে এই বিভাজনটি কিন্তু সত্যি সত্যি একটি হৃদয়বিদারক ব্যাপার। আমাদের দেশের সকল ধর্মের, সকল কালচারের, সকল মানুষের সর্বজনীন এই একমাত্র দিনটি কবে পালন করবো, সেটি নিয়ে কেন আমরা সবাই একমত হতে পারব না?
আমি যে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সঙ্গে একেবারে কথা বলিনি, তা নয়। তারা আমাকে বুঝিয়েছেন বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক বড় বড় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা করে এই তারিখটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তারিখটি অনেক বিজ্ঞানসম্মত এবং এটাই সঠিক তারিখ। তারিখটি যতই বিজ্ঞানসম্মত হোক না কেন, যদি সবাই এটা মেনে না নেয় তাহলে সেটি তো আমাদের সত্যিকার উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন করতে পারল না।
একটি ক্যালেন্ডারের একমাত্র বিজ্ঞান হচ্ছে: পৃথিবী তার কক্ষপথে পুরো সূর্যটা ঘুরে আসতে ৩৬৫.২৪২২ দিন সময় নেয়। সংখ্যাটি যেহেতু অখণ্ড ৩৬৫ নয় তাই চার বছর পরপর একটা লিপইয়ার দিয়ে একটি দিন বাড়াতে হয়। সেটা আবার একটুখানি বেশি হয়ে যায়, তাই একশ’ বছর পর পর লিপইয়ার ছাড়া একটি বছর পালন করতে হয়। সেটাও পুরোপুরি নিখুঁত নয়, তাই চারশ’ বছর পর পর আবার একটা লিপইয়ার দিয়ে সেটা ঠিক করতে হয়।
কেউ যদি এই নিয়মটা মেনে একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করে, তাহলে আগামী কয়েক হাজার বছর ক্যালেন্ডারটি কাজ করে যাবে! অর্থাৎ ধীরে ধীরে বৈশাখ মাসে হাড় কাঁপানো শীত চলে আসবে না এবং কোনো এক সময় মাঘ মাসে কাঠফাটা রোদে কাউকে সিদ্ধ হতে হবে না। (এ ধরনের একটা ত্রুটি শোধরানোর জন্য পোপের নির্দেশে একবার ক্যালেন্ডার থেকে পুরো দশদিন উধাও করে দেওয়া হয়েছিল!)
যাই হোক আমি মনে করি, একটা ক্যালেন্ডারের একমাত্র বৈজ্ঞানিক বিষয়টি ঠিক রেখে, বাংলাদেশের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তারিখ রয়েছে তার ভেতর যতগুলো সম্ভব সেগুলো অক্ষুণ্ণ রেখে পৃথিবীর সব বাঙ্গালিদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নববর্ষ পালন করা উচিত। যেন নববর্ষ নিয়ে কখনও কোনো বাঙ্গালির আর মন খারাপ না হয়। আমি নিশ্চিতভাবে জানি আগরতলার একজন বাঙ্গালির (যিনি মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য কাজ করেছিলেন) এ নিয়ে বুকের মাঝে একটুখানি কষ্ট আছে। যে বিশেষজ্ঞরা আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা আবার বসতে পারেন, আবার আলাপ আলোচনা করতে পারেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষার জন্য ভালোবাসাটুকু দিয়ে সারা পৃথিবীর সবাইকে আমরা একটি বন্ধনে নিয়ে এসেছি। আমাদের অপরূপ বাংলা ক্যালেন্ডারটি তাহলে কেন বন্ধন তৈরি না করে বিভাজন তৈরি করবে?
৪.
২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের কথা বলার সময় আমরা অনেক সময়েই বলে থাকি যে, শুধু আমরাই ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। কথাটি পুরোপুরি সত্যি নয়। যখন কোনো জাতিকে পদানত করতে হয়, তখন প্রথম আঘাতটি করা হয় ভাষার উপর তাই ইতিহাসে ভাষার উপর আঘাতের এবং তার প্রতিরোধের অনেক উদাহরণ আছে। আমার মনে হয় ভাষা নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন সাউথ আফ্রিকায়। সেখানে প্রায় ২০ হাজার কালো ছাত্রছাত্রীদের ভাষা আন্দোলনে স্বেতাঙ্গ পুলিশ গুলি করে অসংখ্য স্কুল ছাত্রদের মেরে ফেলেছিল। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১৭৬, বেসরকারি হিসেব ৭০০ থেকে বেশি।
ভাষার জন্য শুধু আমরাই রক্ত দেইনি। আসামে অহমিয়া ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা করার প্রতিবাদে বাঙ্গালিদের আন্দোলনে ১৯৬১ সালের ১৯ মে পুলিশের গুলিতে ১১ জন মারা গিয়েছিল। তার মাঝে একজন ছিল ১৬ বছরের কিশোরী কমলা। মাত্র ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়ে এসে বড়বোনের শাড়ীটি পরে আন্দোলনে অংশ নিতে এসে গুলি খেয়ে সে শহীদ হয়েছিল।
আমরা যখন একবার আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম, তখন সেই ১১ জন ভাষা শহীদের স্মৃতিতে তৈরি করা শহীদ মিনারটিতে ফুল দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার একটু কষ্ট লেগেছিল, আমরা যেভাবে আমাদের ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে পারি তারা সেখানে সেভাবে পারে না। এমন কী তাদের শহীদ মিনারটিও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে করার অনুমতি পায়নি, বাইরে করতে হয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারিতে পৃথিবীর সব ভাষা শহীদদের আমি গভীর ভালোবাসা নিয়ে স্মরণ করি। পৃথিবীর সবাই যেন তার নিজের ভাষায় কথা বলতে পারে, শিখতে পারে, গান গাইতে পারে, ভালোবাসতে পারে এমন কী মান-অভিমান করতে পারে। মাতৃভাষা তো শুধু আমার ভাষা নয়, এটি আমার আরো একজন মা!
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
এএইচ/এসি