ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৭ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

মহাজগতে যা কিছু আছে তা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরত। তেমনি ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। ভাষা মনুষ্যপ্রাণির পরিচয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়ায় মহান আল্লাহ তায়ালা এটি মানুষকে দান করেছেন। এটি তার বান্দাদের জন্য সেরা নেয়ামত।

ইসলাম এমন একটি জীবন বিধান যেটি সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়, কেননা প্রতিটি ভাষা তাঁরই অসীম কুদরতেরই নিদর্শন। 

পবিত্র কোরআনের সূরা রুমে ২২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তেমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’

এখান থেকে স্পষ্ট হয় ইসলাম প্রতিটি জাতির ভাষার মর্যাদাকে স্বীকার করে।  আল্লাহ মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাদের ভাষা দান করেছেন। আল্লাহর দরবারে বান্দা ইহজগৎ ও আখেরাতের মঙ্গলের জন্য যে প্রার্থনা করবে তা হওয়া উচিত তার মাতৃভাষায়। 

কারণ মাতৃভাষায় মানুষ যে আবেগ অনুভব করে তা অন্য কোনো ভাষায় সম্ভব নয়। মানুষকে আল্লাহ তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। মাতৃভাষা তার আবেগ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। 

সূরা ইবরাহিমের ৪ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকে তাঁর নিজ জাতির ভাষায় পাঠিয়েছি, যাতে তাদের আল্লাহর বিধানসমূহ সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে পারেন।’ প্রত্যেক নবী-রসুল তাঁর মায়ের ভাষায় তাঁর জাতির কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। মায়ের ভাষার মাধ্যমেই মানুষকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। 

আল্লাহ হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে সূরা দুখানের ৫৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আমি তো কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে নাজিল করেছি, যাতে তারা সহজে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ 

সূরা আশ শুরার ৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-‘এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছি। যাতে আপনি মক্কা ও তার আশপাশের লোকদের হাশরের দিন সম্পর্কে সতর্ক করেন।’ 

ভাষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সূরা ইউসুফের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছি, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পার।’
 
সূরা মারিয়ামের ৯৭ নম্বর আয়াতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি অতি সহজে মুত্তাকিদের সুসংবাদ দেন আর কলহকারীদের সতর্ক করেন।’ 

আল কোরআনের এসব আয়াত দ্বারা আমরা আমরা জানতে পারি ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন, তেমন ভাষা-বর্ণও সর্বজনীন। 

বিদায় হজের ভাষণে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। (বুখারী) 

তাঁর কথা থেকেও স্পষ্ট হয়, কোনো ভাষাকে হেয় করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবহেলা করা যাবে না। কেননা, ভাষার স্রষ্টাও মহান আল্লাহ। তাঁর সৃষ্টির অবমূল্যায়ন করা তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর। 

আরবি পরকালের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও সব নবী-রাসূল আরবি ভাষাভাষী ছিলেন না; এমনকি সব আসামি কিতাবও আরবি ভাষায় লেখা হয়নি।

আমরা জানি, তাওরাত কিতাব ইবরানি ভাষায় হজরত মুসা (আ.) এর ওপর নাজিল করা হয়; ইঞ্জিল কিতা সুরিয়ানি ভাষায় হজরত ঈসা (আস.) এর ওপর,  জাবুর কিতাব ইউনানি ভাষায় হজরত দাউদ (আ.) এর ওপর ও সবশেষ আসামানি কিতাব কোরআন আরবি ভাষায় সর্বশেষ নবী ও রাসূল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর নাজিল হয়। 

সর্বশেষ গ্রন্থ আল কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল হওয়ার কারণ স্বয়ং আল্লাহ ব্যাখা করেছেন এভাবে, ‘ইহা আমি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সূরা ইউসুফ-০২)

অর্থাৎ কোরআন নাজিলের সময় আরবদের মাতৃভাষা ছিল আরবি। অনরাবি ভাষায় নাজিল করলে তাদের বুঝতে ও অনুসরণ করতে সহজ হবে হতো। পূর্বোক্ত নবীদের ক্ষেত্রেও আল্লাহ এমনটিা করেন।  

ইসলাম শুধু ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে ব্যাপক জাতীয় কল্যাণ বাধাগ্রস্ত হতে দেয়নি। বরং যাযাবর আরবদের স্থানীয় ভাষায় কোরআন নাজিল করে বিশ্বকল্যাণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

সকল নবী রাসূলদের ইসলাম প্রচার আমরা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি,  ধর্ম প্রচারে শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণার প্রভাব অনস্বীকার্য। এর থেকেই বুঝতে পারি ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব কতটা গভীর। 

এআই/