করোনা প্রাদুর্ভাবে নিহত বেড়ে ২৩৬০
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫২ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার
প্রাণঘাতী করোনা প্রাদুর্ভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছে মৃত্যুর মিছিল। সময়ের ব্যবধানে তা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মরণঘাতী এই ভাইরাসে নতুন করে ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে দেশটির ২ হাজার ৩৪৫ জন নাগরিক প্রাণ হারালেন। আর চীনের বাহিরের ১৫ জনসহ মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩৬০ জন।
অপরদিকে, শুক্রবারও কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। মূল প্রতিষেধক হাতে না পেলেও চীনের বর্তমান চিকিৎসায় কমে এসেছে আক্রান্তের হার। আজ সকাল পর্যন্ত করোনায় নতুন করে ৩৯৭ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
আজ শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭৭ হাজারে পৌঁছেছে। যাদের অধিকাংশই হুবেই প্রদেশের।
মৃতদের মধ্যে চীনের বাইরে রয়েছে ১২ জন। এর মধ্যে হংকং, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দুইজন করে এবং তাইওয়ান, জাপান, ফ্রান্স, ফিলিপাইন ও ইতালিতে একজন করে মারা গেছেন।
চীনের বাইরে সবশেষ আজ শনিবার ইতালির ইত্তরাঞ্চলীয় শহর পাদুয়ায় করোনায় মৃত্যু হয় ৭৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এছাড়া, গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়োয় দুইজনের মৃত্যু হয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৪০ জনের দেহে ভাইরাসটির সন্ধান মিলেছে। এর আগের দিন বুধবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে প্রথমবারের মত করোনায় মারা যায় দুইজন। এখন পর্যন্ত দেশটির ১৮ নাগরিকের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে চীনরে বাহিরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জাপানে। সূর্য্যদয়ের দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা চারশ ছাড়িয়েছে।
এর আগে উৎপত্তিস্থল উহানে এক জাপানি নাগরিক মারা গেলেও গত ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) প্রথমবারের মত জাপানে এ ভাইরাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যু হয়।
এছাড়াও চলতি মাসের প্রথমদিকে হংকং ও ফিলিপাইনে একজন করে মারা যান। আর গত সপ্তাহে এশিয়ার বাইরের দেশ ফ্রান্সে এক চীনা পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। ৮০ বছর বয়সী ওই চীনা পর্যটক সম্প্রতি হুবেই থেকে ফ্রান্সে বেড়াতে এসেছিলেন।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া যায়নি। তবে সিঙ্গাপুরে পাঁচ বাংলাদেশি করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তবে গত সপ্তাহে চীন ফেরত আরও একজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগেও চীন ফেরত দুইজনকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে কারো শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া, হবিগঞ্জ ও বরগুনায় করোনা সন্দেহে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে পৌঁছার পর থেকেই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ব্রিটিশ প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস। এখন পর্যন্ত এর ২১৯ যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
এদিকে করোনার প্রাণকেন্দ্র চীনের উহান শহরটি এখন কার্যত বন্ধ বা অচল হয় আছে। এর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বহু স্বেচ্ছাসেবী আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা-নেয়া করছেন। আবার অনেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের যাদের পরিবহনের ব্যবস্থা নেই তাদের সহায়তার চেষ্টা করছেন। দেশটিতে সাধারণ রোগীর পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে উহানের এক হাসপাতালের পরিচালকও রয়েছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ৩০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু। অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায়, বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এআই/