ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মুজিবনগরে চাষ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর

মেহেরপুর প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত : ১০:১৭ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার

মধ্যপ্রাচ্যের সুস্বাধু ফল খির খেজুর। যা উৎপাদনে প্রাথমিকভাবে সফল হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন মেহেরপুরের কৃষি বিশেষজ্ঞরা। মেহেরপুরের মুজিবনগর কমপ্লেক্সে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি বাগানের ২১টি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। চলছে সাকারের মাধ্যমে চারা তৈরির প্রক্রিয়াও। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রয়োজন এ অঞ্চলে একটি খেজুর রিসার্চ সেন্টার। তা’হলেই সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব মধ্য প্রাচ্যের এই খেজুর চাষ।  

মেহেরপুর মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাংলাদেশ মানচিত্র অংশের পূর্ব পাশের্^ লম্বা সারিবদ্ধ খেজুর গাছের বাগান। বাগানের ওই সকল গাছের মধ্যে এবার ২১টি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। গাছগুলিতে থোকায় থোকায় ঝুলছে  খেতে সুস্বাধু ফল খেজুর। কোন গাছে সবুজ, হলুদ, আবার কোন গাছে লালচে আকার ধারন করেছে খেজুরগুলো। যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন মুজিবনগরে ঘুরতে যাওয়া দুর দুরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থী সহ স্থানীয়রা।  ২০১৪ সালে কুষ্টিয়া ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের কয়েকজন সুনামধন্য কৃষিবিদ মধ্যপ্রাচ্যের  দুবাই থেকে নিয়ে আসেন আজওয়া, আম্বার, মারিওয়ম, ডেগলেটনুর, খালাচসহ ১০ টি জাতের খেজুর। খেজুরগুলো থেকে চারা তৈরি করে মুজিবনগর কমপ্লেক্সে লাগানো হয় আড়াই হাজার গাছ। লাগানোর  মাত্র ৪ বছরের মাথায় ওই সব গাছে এ বছর ফল আসতে শুরু করেছে। আর্টিফিশিয়াল পরাগায়নের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে গাছের ফল ধারণ ক্ষমতা। পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে নেট দিয়ে আর বৃষ্টির পানি যাতে ফলে না পড়ে সেজন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে পুরো থোকা। যা দেখে এখন অনেকেই অনুপ্রানিত হচ্ছেন খেজুর চাষে। 

খেজুর চারা প্রথম যেদিন লাগানো হয় সেদিন বর্তমানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন উপস্থিত থেকে গাছ লাগানো কাজের উদ্বোধন করেন। সম্প্রতি একটি গাছের খেজুর পাকতে শুরু করায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পেড়ে সকলকে খাওয়ানো হয়। খেজুর খেয়ে সকলে প্রশংসা করেছেন। খেতেও স্বুস্বাধু তাই এই খেজুর বাংলদেশে ব্যাপকভাবে উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ঠরা।

মুজিবনগর খেজুর বাগানের ব্যাবস্থাপক মহিবুল ইসলাম বলেন,বাগান যাতে ছত্রাকে আক্রান্ত না হয় সে লক্ষে নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে বাগানটি।  স্প্রে করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। মধ্যপ্রাচ্যে যে ধরনের ফল হয়, সেই মানের ফলই গাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এখান থেকে  বৈজ্ঞানীক পদ্ধতিতে কয়েকটি যাত বাছাই করে আগামীতে কৃষকদের মঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের  উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তা ড. শহীদুল্লাহ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের আবহাওয়ার সাথে এখনকার আবাহাওয়ার মিল না থাকায় এ পর্যায়ে আসতে অনেক প্রতিকুল পরিবেশ পাড়ি দিতে হয়েছে। তবে ২১ টি গাছে পরিপূর্ণ ফল আসায় খুশি তারা। এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে ফলের মিষ্টতা ধরে রাখার। এটি সফল হলে সাকারের মাধ্যমে চারা তৈরি করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের  প্রধান বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তা ড. অভিজিত সাহা জানান, তাদের উদ্যোগে দেশেই এ ফল উৎপাদনের দ্বার খুলতে যাচ্ছে। শুষ্ক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্য। ঐ অঞ্চলের সাথে কিছুটা হলেও মিল রয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলের মাটির। ফলে এ অঞ্চলে খেজুর চাষের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে মুজিবনগরে পরীক্ষামূলক খেজুর চাষে সফলতা আসতে শুরু করেছে। এ চাষ দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে তাজা খেজুরের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে মধ্যপ্রচ্যের আবহাওয়া ও এখনকার আবহাওয়া এক না হওয়ায় সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী গবেষনার। ফলে এ অঞ্চলে সরকারীভাবে একটি ডেট রিসার্চ সেন্টার তৈরির দাবি জানান তিনি।

মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, খেজুর বাগানের প্রথম গাছটি আমি লাগাই। আবার খেজুর সংগ্রহ করার সময় উপস্থিত থাকতে পেরে ভাল লাগছে। তবে বাগানটি মুজিবনগর কমপ্লেক্সের মূল নকশা অনুযায়ী ওখানে লেক তৈরী করা হবে। বিধায় গাছগুলো নিয়ে শংকা আছে। তবে আশার কথা হচ্ছে যে, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন মেশিনের মাধ্যমে গাছগুলো উঠিয়ে কমপ্লেক্সের মধ্যেই লাগানো সম্ভব হবে।  

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক গত ২ আগষ্ট ২০১৯ শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুর মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র প্রকল্পের স্থাপত্য নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিবনগরকে স্বাধীনতার তীর্থ ভূমি হিসেবে গড়ে তুলতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ৩৭ একর জমিও অধিগ্রহন করা হচ্ছে। জায়গার কোন সমস্যা হবেনা। বাগানের একটি গাছও যেন নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা মেশিনের মাধ্যমে গাছগুলো তুলে গাছ লাগানোর নির্ধারিত স্থানে লাগিয়ে সংরক্ষণ করতে পারবে বলে নিশ্চিত করেছেন।

আরকে/