ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

তিন নেত্রীর প্রশ্রয়ে দাপট দেখাতেন পাপিয়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪০ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার | আপডেট: ১০:৫০ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেতা শামীমা নূর পাপিয়া তিন নেত্রীর প্রশ্রয়ে দাপট দেখাতেন বলে জানান মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। 

সূত্রটি জানায়, ২০১২ সালের অক্টোবরে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় নিজ বাসার সামনে তার স্বামীর ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে পাপিয়ার পেটে বিদ্ধ হয়। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ঢাকায় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী ও সংরক্ষিত আসনের নারী এমপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ওই নারী সাংসদসহ যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রীর প্রশ্রয়ে পাপিয়া দম্পতি অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন। 

এছাড়া বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক ও পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কায়কোবাদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার কাছ থেকে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। মূলত যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী ও ঢাকার একজন সাবেক নারী সংসদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করতেন পাপিয়া দম্পতি। এছাড়া চাকরি দেয়ার কথা বলে বা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতেন। 

এদিকে পাপিয়া ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের পর তাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে র‌্যাবকে ‘বিস্ময়কর’ সব তথ্য দিয়েছে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন। 

র‌্যাব সূত্র জানায়, হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট বুক থাকত। গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করেন পাপিয়া। সেখানে ভাড়া বাবদ ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করেন পাপিয়া।

এ বিষয়ে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাজনীতির আড়ালে মাদক ও নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া। রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোয় বিশেষকরে ওয়েস্টিনে মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।

হোটেল কর্তৃপক্ষ র‌্যাবকে জানিয়েছে, ওয়েস্টিনের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট’ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যেতেন পাপিয়া। এসব কাজ করে যে আয় করতেন, তা দিয়ে শুধু হোটেল বিলই দিতেন কোটি কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পাপিয়ার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেয়া খবর। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গীদের ধরতে এরই মধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলছে।

তবে এসব অভিযান নিয়ে র‌্যাব এখনই মুখ খুলতে চাইছে না। এদিকে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা উদ্ধারের ৩ মামলায় পাপিয়া দম্পতির ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার শুনানি শেষে ঢাকার দুই হাকিম আদালত আসামিদের রিমান্ডে পাঠান।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।

গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেয়ার তথ্য অনুযায়ী হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব।

এসব স্যুট ও ফ্ল্যাট থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব।