পাপিয়াকাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন যারা
মঈন বকুল
প্রকাশিত : ০১:০৭ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০১:১৭ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার
অপরাধ সাম্রাজ্যের রাণী যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া কাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকেই। আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে পাপিয়ার মেলামেশার অনেক ভিডিও পাওয়া গেছে। যৌনবাণিজ্যের হেরেমে যাওয়া ওইসব নেতাদের অনেকেই এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন।
এছাড়া পাপিয়ার পদ পাওয়ার নেপথ্যে থাকা নেতা-নেত্রীরাও ফেঁসে যেতে পারেন। এ বিষয়ে তিনজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব নেতা-নেত্রীর ছত্রছায়াতেই পাপিয়া হয়ে উঠেছেন অপরাধ সাম্রাজ্যের রাণী। র্যাব ও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পাপিয়ার উত্থান নিয়ে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কায়কোবাদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার কাছ থেকে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। মূলত যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী ও ঢাকার একজন সাবেক নারী সংসদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করতেন পাপিয়া দম্পতি। এছাড়া চাকরি দেয়ার কথা বলে ও বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
অন্য একটি সূত্র জানায়, ২০১২ সালের অক্টোবরে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় নিজ বাসার সামনে তার স্বামীর ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে পাপিয়ার পেটে বিদ্ধ হয়। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ঢাকায় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী ও সংরক্ষিত আসনের নারী এমপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ওই নারী সাংসদসহ যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রীর প্রশ্রয়ে পাপিয়া দম্পতি অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন।
এছাড়া অভিজাত হোটেলে সুন্দরী সরবরাহ, তরুণীদের দিয়ে প্রভাবশালীদের ব্লাকমেইল এসব করেই উত্থান পাপিয়ার। মাদক ব্যবসা, ক্যাসিনো, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, চাকরি দেয়ার নাম করে প্রতারণা সবেই করতেন এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেত্রী। পাপিয়ার অপরাধের সাক্ষী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, যা এখন আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে।
র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাপিয়া পিউয়ের মোবাইল ফোন অশ্লীল ভিডিওতে ঠাসা। এতে রয়েছে রাতের আড্ডায় ঘটা নানা অপকর্মের ভিডিও। বিভিন্ন হোটেলে নাচাগানার আসরে ভিআইপিদের উপস্থিতি ভিডিও করে রেখেছেন পাপিয়া। আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে হোটেলে মনোরঞ্জনের বিশেষ মুহূর্ত তাদের অজান্তেই ভিডিও করে রাখতেন পাপিয়া। তার মোবাইল ফোন ঘেটে এগুলো পাওয়া গেছে।
এসব ভিডিওতে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে উঠতি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ছাড়াও আমলা এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার অশ্লীল ছবি রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনীতির নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া। রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোয় মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।
মদের নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কৌশলে ধারণ করা হতো ওই তরুণীদের অশ্লীল ভিডিও। পরে ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন পাপিয়া। বনিবনা না হলেই ফেসবুকে ছড়িয়েও দেয়া হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পাপিয়ার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেয়া খবর। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গীদের ধরতে এরই মধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলছে।
এদিকে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা উদ্ধারের ৩ মামলায় পাপিয়া দম্পতির ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার শুনানি শেষে ঢাকার দুই হাকিম আদালত আসামিদের রিমান্ডে পাঠান।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।
গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেয়ার তথ্য অনুযায়ী হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব।
এসব স্যুট ও ফ্ল্যাট থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র্যাব।