ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

৩৯ দেশে করোনা ভাইরাস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:২০ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

চীন থেকে শুরু হয়ে নতুন করোনা ভাইরাস ৩৯ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। রোগটি চীনের সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে থাবা বিস্তার করেছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮২ হাজারে।

প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৮০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু চীনেই ২ হাজার ৭১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে তিন ধাপের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)।

ভাইরাসটির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও এটি মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল প্রিভেনশন (সিডিসি)।’

ইউরোপের ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে সোয়া তিনশ’ মানুষ। এছাড়া ইউরোপের সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও ক্রোশিয়ার পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে।

চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার। সব মিলিয়ে চীনের বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে।

এ রোগে এরই মধ্যে ইরানে ১৫ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২ জন, ইতালিতে ১১ জন, জাপানে ৫ জন, হংকংয়ে ২ জন এবং ফিলিপিন্স, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করে মৃত্যু হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইরানের সঙ্গে বিমান চলাচল স্থগিত রেখেছে। বন্ধ করে দিয়েছে সীমান্ত। কয়েকটি দেশ ইরান ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪৬ জনে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকের সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের মধ্যেই এতদিন সংক্রমণের ঘটনা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন অন্যান্য অঞ্চলেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।

দক্ষিণ কোরিয়ার মার্কিন সেনাসহ আক্রান্ত ১১৪৬

দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক হয়ে উঠেছে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছছে ১১শ’র বেশি। বুধবার দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের এক সৈন্যসহ নতুন ২৮৪ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৬১ জনে। সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকে দেশটিতে কভিড-১৯ রোগে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোরিয়ান রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেসিডিসি) জানিয়েছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১৩৪ জন দায়েগু শহরের বাসিন্দা।

ইউরোপজুড়ে প্রাদুর্ভাব ছড়াচ্ছে ইতালি থেকে

বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা দিয়েছে। সব ক্ষেত্রেই শনাক্তদের সঙ্গে ইতালির সংযোগ আছে।

বিবিসি জানায়- অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও ইতালি ফেরত ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছে দেশগুলো। আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়াও একই কথা জানিয়েছে।

এর পাশাপাশি লাতিন আমেরিকায় নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো পজিটিভ একজনকে পাওয়া গেছে। ব্রাজিলের ওই নাগরিক মাত্রই ইতালি থেকে ফিরেছেন। সম্প্রতি ইউরোপের মধ্যে ইতালিতেই নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে মারাত্মক রূপ নিয়েছে।

দেশটিতে তিন শতাধিক লোক কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অস্ট্রিয়ার টিরোল প্রদেশের প্রধান শহর ইনসবরুকে বসবাসকারী তরুণ এক ইতালীয় দম্পতি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

ওই যুগলের একজন স্থানীয় একটি হোটেলে কাজ করতেন, হোটেলটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সুইজারল্যান্ড জানিয়েছে, ইতালির সীমান্তবর্তী টিচিনোতে বসবাসকারী সত্তরোর্ধ এক ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর তাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির মিলান শহরে তিনি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হন বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

ইতালি থেকে দেশে ফেরার পর ক্রোয়েশিয়ার এক ব্যক্তির শরীরেও সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বলকান অঞ্চলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি তিনি। স্পেনের ক্যানারি দ্বীপের তেনেরিফে একটি হোটেলে ওঠা এক ইতালীয় চিকিৎসক ও তার স্ত্রীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর হোটেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

মূল ভূখণ্ডে প্রথম রোগী শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে স্পেন। বার্সেলোনার ওই নারী সম্প্রতি উত্তর ইতালিতে ছিলেন। ফ্রান্স ও জার্মানিতেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এদের মধ্যে উত্তর ইতালি থেকে ফেরা কয়েকজনও রয়েছে।

ইরানের মন্ত্রী-এমপির করোনা ভাইরাস

ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও একজন এমপি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এ রোগে এরই মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরচি এক ভিডিও বার্তায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা ও ওষুধ সেবন শুরু করার কথা জানিয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ইরানে হঠাৎ করে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক।

মঙ্গলবার ইরানের রাজধানী তেহরানের পার্লামেন্ট সদস্য মাহমুদ সেদেঘিও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে টুইট করেছেন। টুইটে লিখেছেন- ‘এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, সেই আশা আর বেশি করছি না’।

এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে সঙ্গীত অনুষ্ঠান ও ফুটবল ম্যাচ বাতিল করেছে ইরান। অনেক প্রদেশে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এ ভাইরাস সংক্রমণকে অনাকাক্সিক্ষত ও অশুভ হিসেবে বর্ণনা করে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাব।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিভিন্ন শহর থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ে যে তথ্য তাদের কাছে আসছে, তা ইরানি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যর চেয়ে অনেক বেশি।

স্পেনের দ্বীপে হোটেলবন্দি কয়েকশ’ পর্যটক

স্পেনের ক্যানারি দ্বীপের তেনেরিফে একটি হোটেলে ওঠা এক ইতালীয় চিকিৎসকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ায় হোটেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হোটেলের ভেতরে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে অতিথি হিসেবে আসা শত শত পর্যটককে।

স্পেন কর্তৃপক্ষ তাদের ভাইরাস পরীক্ষা করে দেখছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে হোটেলের নাম ‘এইচ১০ কোস্টা আদেজে প্যালেস’ বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে হোটেলে নিজ নিজ কক্ষে থাকতে বলা হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ইতালির ওই চিকিৎসক করোনাভাইরাস কবলিত লোম্বারডি অঞ্চল থেকে এসেছেন। তিনি ছয় দিন ধরে হোটেলে অবস্থান করছিলেন। ইতালীয় চিকিৎসকের স্ত্রীরও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাদের এখন আলাদা করে একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হতে আবারও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।