দিল্লির ‘রক্ষাকর্তা’ হয়ে ওঠা কে এই বিচারপতি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:০৭ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:১২ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার
দিল্লির সেই বিচারপতি একরাতেই বদলি
একরাতের মধ্যেই দিল্লির ‘রক্ষাকর্তা’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন দিল্লির সহিংসতায় আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার মাঝরাতে তার কাছেই নির্দেশ এলো- দিল্লি হাইকোর্ট থেকে অন্যত্র বদলির। তাও মুহূর্তের মধ্যেই!
বিচারপতি এস মুরলীধরের বদলির সিদ্ধান্তের নিন্দায় সরব হয়েছেন দিল্লির হাই কোর্টের আইনজীবীরা। কিন্তু কে এই মুরলীধর? আসুন, পরিচয় হওয়া যাক দিল্লি হাই কোর্টের ওই বিচারপতি এস মুরলীধরের সঙ্গে।
১৯৮৪ সালে সেপ্টেম্বরে চেন্নাইয়ে প্রথম আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস শুরু করেন এস মুরলীধর। তারপর ১৯৮৭ সালে চলে যান দিল্লিতে। দিল্লি হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন।
সুপ্রিম কোর্টে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং নর্মদা বাঁধ তৈরির জন্য ঘরহারা মানুষদের জন্য লড়াই করেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মুরলীধর। এরপর তিনি জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরামর্শদাতা নিযুক্ত হন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ল’কমিশন-এর আংশিক সময়ের সদস্য হন তিনি।
২০০৪ সালের অগস্টে ‘ল, পভার্টি অ্যান্ড লিগাল এইড: অ্যাকসেস টু ক্রিমিনাল জাস্টিস’ নামে নিজের লেখা একটি বইও প্রকাশ করেন তিনি। বিচারপতি হিসাবে দিল্লি হাই কোর্টে তিনি ২০০৬ সাল থেকে রয়েছেন। ওই বছর ২৯ মে-তে দিল্লি হাই কোর্টে বিচারপতি হিসাবে কাজে যোগ দেন।
দীর্ঘ এই ১৪ বছর দিল্লি হাই কোর্টে বিচারপতি থাকাকালীন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা গুরুত্বপূর্ণ মামলা সামলেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা মামলা। সমকামিতাকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা থেকে মুক্ত করার রায়ও তিনিই দেন।
তার স্ত্রী উষা রামানাথন প্রযুক্তি আইন এবং গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ। ব্যক্তিগত মহলে তার আরও একটা পরিচয় রয়েছে। ‘ফিটনেস ফ্রিক’ হিসাবে পরিচিত তিনি। প্রতিদিনই নিয়ম করে লোধি গার্ডেনে মর্নিং ওয়াক এবং জগিং করেন। আর সপ্তাহের রোববার দিনটি তার বরাদ্দ দিল্লির সেন্ট্রাল রিজ এলাকায় সাইক্লিংয়ের জন্য।
সম্প্রতি দিল্লি-হিংসা নিয়েও ভীষণ তৎপরতা দেখিয়েছেন তিনি। দিল্লির মুস্তাফাবাদে গোষ্ঠী সংঘর্ষে বহু আহত স্থানীয় ছোট্ট হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পুলিশের থেকে কোনও সাহায্য না-পেয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার সময় বিচারপতি মুরলীধরের বাড়িতে যান চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মীরা। রাতেই তাঁদের আর্জি শুনতে রাজি হন বিচারপতি।
এমন একজন বিচারপতির বদলি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি বলে সরব হন আইনজীবীরা। কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। দিল্লি হাইকোর্ট থেকে বিচারপতি মুরলীধরের বদলির প্রসঙ্গ এর আগেও দু’বার উঠেছিল। ২০১৮-র ডিসেম্বর ও ২০১৯-এর জানুয়ারিতে।
সাধারণত, এমন ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি জারির পর হাতে ১৪ দিন সময় পান বিচারপতিরা, কিন্তু বিচারপতি মুরলীধরের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। সেখানেই উঠছে প্রশ্ন? কী এমন হলো যে, হঠাত্ বুধবার রাত ১১ নাগাদ নোটিশ দিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে বিচারপতি মুরলীধরকে বদলি করা হলো?
সরকারের যুক্তি, বিশয়টি নিয়ম মেনেই হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কলেশিয়ামের গত ১২ ফেব্রুয়ারির সুপারিশ মেনেই বিচারপতি মুরলীধরের বদলি হয়েছে। কলেশিয়ামের বিচারপতিদের সম্মতিতেই এই পদক্ষেপ করা হয়।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এদিন সকালে দিল্লি হিংসা নিয়ে মামলার শুনানিতে কেন্দ্রকে কড়া ভর্তসনা করেন বিচারপতি মুরলীধর। অমিত শাহের পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এদিকে, বিচারপতি এস মুরলীধর বদলি হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টের বিচারপতির আসনে বসবেন বলেই জানা গেছে। সূত্র- আনন্দবাজার ও জি নিউজ।
এনএস/