করোনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়ে ২৮৫৮
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫০ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা। এমনকি তা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সহজেই। নতুন করে আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া।
গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে নতুন করে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে ইরান, ইতালী ও জাপানের নাগরিক রয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর মিছিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৫৮ জনে।
অপরদিকে, পাল্লা দিয়ে নিহতের সংখ্যার সাথে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। বুধবারের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে কিছুটা কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে এক লাফে ১৫০ জন আক্রান্ত হয়েছে ইতালিতে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৮৩ হাজার। যেখানে ইরানের একজন উচ্চ পদস্থ নারী কর্মকর্তাও রয়েছেন।
আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরিছেন আরও সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। এ নিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়ার এ ভাইরাসে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার সংখ্যা সাড়ে ৩৬ হাজার।
আজ শুক্রবার চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে।
প্রাণঘাতি ভাইরাসটি ইতিমধ্যে এশিয়া ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকায় ছড়িয়েছে। যেখানে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্রাজিল, সুইডেন, নরওয়ে, গ্রিস, রোমানিয়া, আলজেরিয়া ও এশিয়ার পাকিস্তানের নাম। সবশেষ আক্রান্তের দেশ নাইজেরিয়া। বৃহস্পতিবার দেশটির এক নাগরিকের দেহে ভাইরাসটি সনাক্ত করে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে চীনের বাহিরে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে। দেশটিতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দেশটিতে করোনায় মারা গেলেন ২৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যেখানে মাসৌমেহ এবতেকার নামে দেশটির একজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্টও রয়েছেন।
তবে ইরানের চেয়ে নিহতের সংখ্যায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, চীনের বাহিরে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২৭ জনের দেহে করোনা সনাক্ত করেছে দেশটির চিকিৎসা বিভাগ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২।
দক্ষিণ কোরিয়ার পর এবার আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় এক লাফে ১৫০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আরও ৪ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটির থাবায় ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ১৭, আক্রান্ত ৬৫০ জন। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশটির ১০ শহর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও থেমে নেই আক্রান্তের হার। যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছড়াচ্ছে বলে খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবামাধ্যমগুলো।
জাপানি প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে এখন চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই প্রমোদতরীর যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭০৫ জন। এছাড়াও, মৃতের সংখ্যা একজন বেড়ে ৪, হংকংয়ে-২, ফ্রান্সে-২, তাইওয়ানে-১, জার্মানিতে-২ ও ফিলিপাইনে একজন মারা গেছেন।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ভয়ে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণ সাময়িক স্থগিত করেছে সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
গত ৩১ ডিসেম্বর হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু। অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায়, বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ দিনে দিনে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। কিছু রোগীর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তাদের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে।’ এই রোগের কোনো প্রতিষেধক এবং ভ্যাকসিন নেই। মৃতদের অধিকাংশই বয়স্ক যাদের আগে থেকেই শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতা ছিল।
এআই/