ব্যস্ত শহরগুলো যেভাবে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে পারে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:১৪ এএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার
কয়েকটি শহরে লোকজনকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে- এএফপি
করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি এখন অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া আর সব মহাদেশেই। এই প্রথমবারের মতো চীনের বাইরে এটি দ্রুতগতিতে ছড়াতে শুরু করেছে। বড় শহরগুলোতে যেখানে বহু মানুষের কাজ আর বসবাস- সেখানে এখন এই মহামারিই বড় উদ্বেগের কারণ। এগুলোতে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। খবর বিবিসি’র।
এখানে দেখুন বিশ্বজুড়ে নানা শহরে কি ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে:
গণ পরিবহন
ভাইরাস ছড়ানোর সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো গণপরিবহন। থুথু, কফ বা সর্দি - এসবের মধ্যে দিয়েই ভাইরাস প্রধানত ছড়ায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার সময় চালানো এক সমীক্ষা বলছে, ফ্লু’র সময়ে যারা গণপরিবহন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের সম্ভাবনা ছয় গুণ বেশি।
গণ পরিবহনও ভাইরাস ছড়ানোর আরেকটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র- এএফপি
আর এসব কারণেই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইতালি কিংবা ইরান পর্যন্ত সব দেশই ট্রেন ও বাস স্টেশনগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
বড় জমায়েত
যেসব ইভেন্টে অনেক মানুষ জমায়েত হয় - যেমন খেলার মাঠ - এগুলো হলো ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাব্য ক্ষেত্র এবং এমন অনেক জায়গা ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে অনেকে। মহামারির কারণে সাংহাইতে চাইনিজ ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি স্থগিত করা হয়েছে।
ষষ্ঠ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লীগও বিলম্বিত হচ্ছে। ইউরোপে রাগবি ও ফুটবলের যেসব প্রতিযোগিতায় ইতালির অংশগ্রহণ আছে - সেগুলো স্থগিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব ক্রীড়ার সবচেয়ে বড় আয়োজন অলিম্পিকে, যেটি টোকিওতে শুরু হওয়ার কথা আগামী ২৪ জুলাই।
জাপানে বড় জমায়েতে না আসতে বলা হচ্ছে- এএফপি
ইতোমধ্যেই টর্চ রিলের আকার ছোট করা হয়েছে এবং করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে এবারের অলিম্পিক স্থগিত করে দেয়ার সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দেয়নি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। খেলাধুলার বাইরে বেশ কিছু ধর্মীয় জমায়েতেও নানা বিধি নিষেধ আসছে। সৌদি আরব ইতোমধ্যেই বিদেশীদের জন্য ওমরাহ বন্ধ করেছে। বন্ধ করা হয়েছে মক্কা ও মদিনায় ভ্রমণও।
স্কুল
বিভিন্ন দেশের সরকার থেকে স্কুলগুলোকে করোনা ভাইরাস বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জাপান, থাইল্যান্ড, ইরান ও ইরাক- স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এখনো স্কুল বন্ধ করতে বলেনি। তবে ইংল্যান্ডের চারটি স্কুল ইতালিতে একটি স্কিইং ট্রিপ থেকে কয়েকজন ফিরে আসার প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর জন্য ক্লাস বাতিল করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত দেশগুলোতে যে অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে সম্প্রতি ভ্রমণে গেছেন- তাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে তাদের সন্তানদের আপাতত স্কুলে না পাঠানোর কথা বলেছে।
অফিস
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে করোনা ভাইরাস। সান ডিয়েগো ও সান ফ্রানসিসকোতে জনস্বার্থ বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং কর্মীদের কারখানায় বাইরে থেকে আসা কারও সাথে হ্যান্ডশেক না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অনেক জায়গায় কর্মীদের বাড়িতে থেকেই কাজ করতে বলা হয়েছে- রয়টার্স
ফেসবুক মার্চে হওয়ার কথা তার একটি বার্ষিক মার্কেটিং কনফারেন্স বাতিল করেছে। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইবার সিকিউরিটি কনফারেন্স থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে অনেক স্পন্সরসহ নানা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র লোকজনকে ফোন বা অনলাইনের মাধ্যমে বাড়িতে থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে- বিশেষ করে যদি কারও গায়ের তাপমাত্রা বেশি মনে হয়।
একজন এমপি জাপান থেকে ফেরার পর পুরো থাইল্যান্ড পার্লামেন্ট জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে- এএফপি
জনসচেতনতা
জনসচেতনতা বাড়ানো এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেমন হাত ধোয়া- যা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো হলো:
১. নিয়মিত হাত ধুতে হবে
২. মুখ ও নাক ঢেকে রাখা
৩. রেসপিরেটারি সমস্যায় আক্রান্তদের কাছ থেকে দুরে থাকা
৪. বন্য প্রাণী বা খামারে থাকা প্রাণীর কাছে সুরক্ষা ছাড়া না যাওয়া
হাসপাতাল
যেহেতু করোনাভাইরাসের এখনো কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি- তাই হাসপাতালগুলো চেষ্টা করছে কিভাবে লক্ষণগুলো কমানো যায়। রোগীদের আলাদা কক্ষে রাখা ও কর্মীদের সুরক্ষা পোশাক পরিধানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ধারণা করছে ভাইরাস আরও ব্যাপকভাবে ছড়ালে জরুরি রোগীদের গুরুত্ব দেয়া হবে বেশি ও বাকীদের জন্য ফোনে পরামর্শ দেয়া হবে।
ভ্রমণকারীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে সীমান্তে বা বিমানবব্দরে- এএফপি
আইসোলেশন/ কোয়ারেন্টিন
যুক্তরাজ্যে যারা আক্রান্ত এলাকা ভ্রমণ করে এসেছে তাদের স্ব-উদ্যোগে কোয়ারেন্টিন করতে বলা হয়েছে। চীনের উহান- যেখান থেকে মহামারী শুরু- সেই শহরটিই বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। একই ব্যবস্থা নিয়েছ ইতালি।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় এসব পদক্ষেপ কাজ হবে কমই। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, শহর বিচ্ছিন্ন করে দিলে পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকা আছে। এতে ব্যাহত হতে পারে জরুরি খাদ্য ও ঔষধ ডেলিভারির মতো কাজও। কেউ কেউ বরং পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের সামলায় এমন ডাক্তার-নার্স ও অন্য কর্মীদের আলাদা করে রাখার।
এমএস/