ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

এবার হলো সারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৮ এএম, ১ মার্চ ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১০:৩১ এএম, ১ মার্চ ২০২০ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

চরম উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে মাসব্যাপি অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০। সাহিত্য প্রেমীদের এ মিলনমেলায় আগমন ঘটেছে নতুন লেখক ও কবিদের। লেখক ও পাঠকদের এ সমাবেশের আয়োজক বাংলা একাডেমি বলছে, এ বার বই বিক্রি হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক। তবে প্রকাশকরা বলছেন, কয়েকটি প্রকাশনী বাদে অন্যদের বিক্রি গত বছরের তুলনা কম ছিল। 

বাংলা একাডেমির হিসাবে, এ মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। গেল বছর হয়েছিল ৮০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। ২০১৮ সালের মেলায় বই বিক্রি হয়েছিল ৭০ কোটি টাকার। ২০১৭ সালে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে ৪২ কোটি, ২০১৫ সালে বই বিক্রি হয়েছিল প্রায় ২২ কোটি টাকা। আর ২০১৪ সালে মাস জুড়ে বই বিক্রি হয়েছিল মাত্র সাড়ে ১৬ কোটি টাকা।

নতুন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার নতুন বই এসেছে ৪ হাজার ৯১৯টি। তবে বাংলা একাডেমির বিচারে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি। মেলার শেষ দিনে একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ জানায়, এ বছর সর্বোচ্চ বই প্রকাশিত হয়েছে কবিতার। যা সংখ্যার হিসাবে ১ হাজার ৫৮৫টি। এ ছাড়া এ বছর গল্প ৬৪৪, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, গবেষণা ১১২, ছড়া ১১১, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনী ১৪৯, রচনাবলি ৮, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২, নাটক ৩৪, বিজ্ঞান ৮৩, ভ্রমণ ৮২, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি ১৩, স্বাস্থ্য ৩৬, রম্য ৪০, ধর্মীয় ২০, অনুবাদ ৫৭, অভিধান ১৪, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ৬৭, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ১৪৪ এবং বিবিধ বিষয়ে বই এসেছে ২৬৮টি।

বইমেলার শেষ দিনে মেলায় ছিল জনস্রোত। এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। এদিন মেলার শুরু থেকেই লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকালের দিকে মেলা রূপ নেয় জনস্রোতে। ছিল হাতে হাতে বই। অনেকে শেষ সময়ে এসে তাদের পছন্দমতো বই কিনেছেন। অনেকে আবার শেষ দিনে মেলায় ছুটে এসেছেন শুধু বইয়ের টানে।

সমাপনী অনুষ্ঠান :সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘আজ যুগপৎ আনন্দ ও বেদনার দিন। আনন্দ এই কারণে যে, আমরা সবাই মিলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী বইমেলা সফলভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি।’ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি।’

স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘এবারের মেলা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। সব আয়োজনই কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে; অমর একুশে গ্রন্থমেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের এবারের সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে আগামীর আয়োজন আরও সার্থক ও সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকব এবং সে প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই আপনাদের সবাইকে কাছে পাব।’

প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, গতবার ৩০ দিনে বাংলা একাডেমি মোট দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল। এবার ২৭ দিনে বাংলা একাডেমি দুই কোটি ২৮ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। শেষ দিনের হিসাব টানলে বাংলা একাডেমির মোট বিক্রি হবে কমপক্ষে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা। গতবারের সমগ্র মেলায় ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। গতবার আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বই বিক্রি হয়। এবার ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, ২০১৯ সালের মোট বিক্রির চেয়ে অন্তত ৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে এবার অন্তত ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, মেলায় প্রকাশিত প্রায় পাঁচ হাজার বইয়ের মধ্যে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর, বিকাশের সিএমও মীর নওবত আলী এবং ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান: অনুষ্ঠানে সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে 'সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮' প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই সাহিত্যিকের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, সনদ, ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান: সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২০, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত 'প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য' গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে, মঈনুস সুলতান রচিত 'জোহানেসবার্গের জার্নাল' গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত 'স্মৃতির পথরেখা' গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশনসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক আয়োজন :সমাপনী আয়োজনের অংশ হিসেবে রাতে স্বাধীনতাস্তম্ভ সংলগ্ন মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী ও হাসান আরিফ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে ছিল লেজার শো।

এমএস/