ঢাকা, রবিবার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২০ ১৪৩১

রেসকোর্স ময়দানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হইবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১০ পিএম, ১ মার্চ ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০২:৫৬ পিএম, ২ মার্চ ২০২০ সোমবার

ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সমগ্র দেশব্যাপী জাতীয় শোক দিবস পালনের প্রাক্কালে ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন যে, মাতৃভূমির মুক্তিযুদ্ধে দেশ মাতৃকার যেসব কৃতী সন্তান শহীদ হইয়াছেন তাঁহাদের স্মরণে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হইবে।

প্রধানমন্ত্রী ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ অফিসে এক কর্মী সভায় ভাষণদান করিতে ছিলেন। নয় মাসাধিককাল কারাবাসের পর শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলায় ফিরিয়া তিনি প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ অফিসে পদার্পণ করেন।

এই কর্মী সমাবেশে বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়িয়া হানাদার বাহিনীর গণহত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতায় ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা নির্ধারণ ও ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য দলের কর্মী এবং পরিষদ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করিয়া প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাহারও আইনকে নিজের হাতে তুলিয়া নেওয়া উচিত নয়।

দুষ্কৃতিকারীদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের ভার সরকারের উপর ছাড়িয়া দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করিয়া বঙ্গবন্ধু বলেন, কোন জাতিই উদার মানসিকতার অধিকারী না হইয়া সমৃদ্ধি অর্জন করিতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য দলীয় কর্মীদের ধন্যবাদ জানাইয়া বঙ্গবন্ধু তাহাদের প্রতি দেশ গঠনের কাজে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, তাহার উদ্দেশ্য ছিল সরকারের বাহিরে থাকিয়া জনগণের কল্যাণার্থে গ্রাম হইতে গ্রামে ছুটিয়া যাওয়া। কিন্তু গণদুশমনদের চক্রান্তে সে বাসনা তাঁর বাস্তবায়িত হইতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণ ও সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের জনগণও এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ রহিয়াছে এবং কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষাকল্পে তাহারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার জন্যই তাঁহাকে ক্ষমতার আসনে বসিতে হইয়াছে। তিনি প্রত্যয়দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশ হইবে ষড়যন্ত্রকারীদের গোরস্তান। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া বঙ্গবন্ধু বলেন, কলকাতা যাইবার উদ্দেশ্য হইতেছে পশ্চিম বাংলার মহান জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন।

তিনি বলেন, কলকাতা যাইবার আগে আমি আমার সোনার বাংলাকে একবার প্রাণ ভরিয়া দেখিয়া যাইতে চাই। তিনি ১৯টি জেলার সবকটিই সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এখনও আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে কার্যরত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, তিনি এক পাকিস্তানের স্মৃতিবাহী দলীয় পতাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চিরতরে সম্পর্ক বিচ্ছেদের দরুন দলের পতাকা পরিবর্তিত হইবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, শয়তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা যায় না- বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্বেরই প্রশ্নই ওঠে না।

এই যে বেদনা এর কোন ভাষা আছে?
বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী গণসংগঠন আওয়ামী লীগের প্রধান এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শনিবার ১৫ জানুয়ারি (১৯৭২) সুদীর্ঘ পৌনে দশ মাস পরে দলীয় অফিসে পদার্পণ করিয়া এক কর্মীসভায় ভাষণ দানকালে এক পর্যায়ে কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়েন। আবেগে-কান্নায় বার বার তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসে। কান্নাভেজা কণ্ঠে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “সামান্য অবস্থা হইতে আমি এই দলকে গড়িয়া তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করি। অনেক সংগ্রাম-সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়া আওয়ামী লীগ আজ এক শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমার বহু সহকর্মী আজ আমার পাশে নাই। তাঁরা চিরতরে হারাইয়া গিয়াছে।” তিনি বলেন, “আমি তোমাদের নেতা নই, তোমরা আমার কর্মী নও- তোমরা আমার ভাই।” এই কথা কটি বলিতে বলিতে তিনি কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়েন- তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া যায়।

সূত্র : এই দেশ এই মাটি গ্রন্থ।

এএইচ/