ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

মনের জোরেই জয়! ক্যান্সার রুখে দিলেন ৯৮ বছরের ‘তরুণী’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৪০ পিএম, ৩ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:৪০ পিএম, ৩ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার

কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকদের। আর তাতেই জিতলেন ৯৮ বছরের ‘তরুণী’। ক্যান্সারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তিনি। আর ১০০ বছর ছুঁই ছুঁই এই রোগীকে নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত ভারতের সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে চিকিৎসকরা। কঠিন সময়ে মুখে দাঁড়িয়েও তার সাহস দেখে রীতিমতো তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন সবাই। চিকিৎসক থেকে নার্স, নার্স থেকে কর্মী প্রত্যেকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন। আপাতত ঘটনাকে মেডিক্যাল বিজ্ঞানের অন্যতম উদাহরণ বলেই মানছেন চিকিৎসকরা। খবর জি নিউজ’র।

বর্ধমানের সুহারী গ্রামের বাসিন্দা শংকরী বালা দে। কাগজপত্রে বয়সের হিসাব ৯৮। কারও মতে তা দু’বছর কম বেশিও হতে পারে। চেস্ট ওয়ালের ওপর চামড়ায় ক্য়ান্সার আক্রান্ত হয়েছেন এই বয়সে। রোগ ধরতেই পেরিয়ে গিয়েছে অনেক সময়। রোগ যখন ধরা পড়ল তখন তা গোটা বুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু ৯৮ বছর বয়সী নারীর হৃদযন্ত্রের যা অবস্থা তাতে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। কারণ এই বয়সে অজ্ঞান করে অপারেশন করা যাবে না। এরপর বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হয় শংকরী বালা দের পরিবার।

একাধিক নামী চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিল পরিবার। সবারই মত এক, এহেন রোগীকে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার কার্যত অসম্ভব। কেউই ঝুঁকি নিতে চাননি। কলকাতার একাধিক মেডিক্যাল কলেজ ফিরিয়েছে শংকরীকে। এরপরেই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক মানস গুমটা ও অমিতেশ ঝা’র অধীনে ভর্তি হন শংকরী। সেখানেও অস্ত্রোপচারের আগে অনেস্থেসিয়া বিভাগ, কার্ডিওলজি বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানিয়ে দেয় অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। বয়সের কারণে হৃদযন্ত্র ও শারীরিক পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয় একেবারেই।

তবে শংকরী অনড়। সাফ জানিয়ে দেন, যা হওয়ার অপারেশন টেবিলেই হবে, মরতে হলে সেখানেই মরবেন। ঝুঁকি নিতে তিনি প্রস্তুত। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেন চিকিৎসকরা। বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থাও রাখেন। শুরু হয় চিকিৎসা। ৯৮ বছরে রোগীর স্পর্ধা দেখে উৎসাহিত চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া করেই অস্ত্রোপচার করবেন। না হলে এমনিতেই যে মৃত্যু অবধারিত। এরপর বুকের ওই অংশ কেটে ফেলে সেলাই করা হয়েছে। আপাতত সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরেছেন বৃদ্ধা।

চিকিৎসকরা বলছেন, শুরু থেকেই নাছোড় মনোভাব ছিল শংকরী দেবীর। যা চিকিৎসকদেরও উৎসাহিত করেছে। দিনরাত কাজ করেছে গোটা টিম। সব মিলিয়ে সার্জারি বিভাগের ওই চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর রোগীর সাহস মিলে গিয়েই ঘটল মিরাকেল। বলছেন চিকিৎসকরাও।